নির্বাচনে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, বাজেটেও হবে না
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯
সরকারকে অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এ অনির্বাচিত সরকারের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, তেমনি চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতা।
বনানীতে নিজের বাণিজ্যিক কার্যালয়ে খসরু বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত দেশ বাংলাদেশ। এ অনির্বাচিত সরকারের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধও নয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি কিছুসংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা বাজেট প্রণয়ন করছে, তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে; আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে।’
খসরু আরও বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণনির্ভর বাজেট দিতে হচ্ছে। এক মিলিয়নের যে বাজেট তিন মিলিয়ন দেয়া হচ্ছে এ টাকা আমার আপনার পকেট থেকেই নেয়া হবে। করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এ টাকা সরকার মানুষের পকেট কেটে নেবে।’
খসরু বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সংসদে এ বাজেট দিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকায় দেশে সুশাসন নেই। সুশাসনের অভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বন্ধ, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট। ঋণনির্ভর অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে। যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোনো সূচকের সঙ্গে তার মিল নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে।’
বিএনপি সরকারের আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী খসরু বলেন, ‘ধনী ও সুবিধাভোগী শ্রেণির কথা চিন্তা করেই প্রস্তাবিত বাজেট দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে ঋণ ও করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বাজেটের ফলে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ঋণনির্ভর হয়ে পড়বে। এ ঋণ শোধ দিতে দেশের মানুষের সরাসরি প্রভাব পড়বে। নাগরিকদের ভুগতে হবে চরমভাবে।’
এর আগে বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট।
শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভব না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।
বিকেল ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
কেএইচ/এনডিএস/পিআর