ইতিহাসের বেদনাদায়ক ঈদ এবার : রিজভী
এবারের ঈদ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘সম্ভবত আর মাত্র একদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবার প্রতি রইল আগাম ঈদের শুভেচ্ছা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদ হবে এবার। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে চাই- বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক নয়, সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঈদ হবে এবার। কারণ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবৈধ ক্ষমতার জোরে কারাবন্দী রাখা হয়েছে। একদলীয় বাকশালী সরকারের কবলে পড়ে দেশ এখন এক চরম নৈরাজ্যজনক অবস্থার মধ্যে নিপতিত। তাই বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই।’
তিনি বলেন, ‘ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কোটি কোটি কৃষকের ঘরে ঈদ আনন্দ নেই। বেশির ভাগ মানুষের পকেটে টাকা না থাকায় মার্কেটগুলো প্রায় ফাঁকা, বেচাকেনা নেই; সেটি স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। সুতরাং তাদের মনেও ঈদের আনন্দ নেই। এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদরাসার অনেক শিক্ষক এখনও বেতন-বোনাস পাননি। তাদের মনেও ঈদের আনন্দ নেই। বিদেশ থেকে অনেক প্রবাসীর টাকা আসতো বাংলাদেশে, এখন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এবং অন্যান্য দেশ থেকে কাজ না থাকায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। দেশে কোটি কোটি যুবক বেকার। তাদের কেনো কাজ নেই, আয়ও নেই। তাদের ঘরেও ঈদের আনন্দ নেই। শেয়ারবাজার বারবার ধসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুঁজিসহ সব নিঃশেষ হয়ে গেছে, তাদের ঘরেও আনন্দ নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলের ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, তারা বাড়িছাড়া, ঘরছাড়া অথবা কারাগারে, তাদের ঘরেও ঈদ আনন্দ নেই।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান দুঃশাসনের কবলে পড়ে হাজার হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার, নারী-শিশু খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার, তাদের পরিবারেও ঈদের আনন্দ নেই। সুতরাং স্বস্তির ঈদ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চরম মিথ্যাচার, অনুশোচনাহীনতা ও নির্যাতিত মানুষদের প্রতি ইতিহাসের সেরা তামাশা।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘র্যাব মহাপরিচালক বলেছেন- গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ৩০০ জন পলাতক রয়েছেন। র্যাব মহাপরিচালকের বক্তব্য শুনে জাতি বিস্মিত ও স্তম্ভিত। জঙ্গিরা জামিন পাচ্ছে কীভাবে? কারণ আমরা জানি নিম্ন আদালত সম্পূর্ণরূপে সরকারের করায়ত্তে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, বরেণ্য আইনজীবী কেউই নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান না। তাহলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা নিম্ন আদালত থেকে কীভাবে ভয়ংকর জঙ্গি হামলায় জড়িত জঙ্গিরা জামিন পাচ্ছে? সরকার জঙ্গি দমনের নামে যা করছে তা পরিকল্পিত নাটক কি না তা নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন থেকে সংশয় রয়েছে। র্যাবের মহাপরিচালকের বক্তব্যে সেই সংশয় আরও গভীর থেকে গভীরতর হলো।’
তিনি বলেন, ‘আসলে জঙ্গি দমনের নামে কোনো খেলাধুলা চলছে কি না সেই প্রশ্নও মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। কোনো সহানুভূতি লাভের জঙ্গি দমনের নামে রূপকথার সিন্দাবাদের দৈত্যের কাহিনী রচনা করা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নটিও আরও দীর্ঘতর হলো র্যাবের মহাপরিচালকের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘সত্য ও ইতিহাস এখন বাকশালী হুকুমের কাছে বন্দী। আওয়ামী ম্যানুফ্যাকচার্ড ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সেই লেখক কিংবা ইতিহাসবিদকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। বই প্রকাশের পাঁচ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার এবং বর্ষীয়ান সাবেক মন্ত্রীকে যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে সেটি জনগণের কাছে খুবই পরিষ্কার। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগারদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার সত্য ইতিহাস যখন বিভিন্ন লেখকের লেখায় ফুটে ওঠে তখন তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অবৈধ ক্ষমতার দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত আওয়ামী সরকার বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং সেই লেখকদের নানাভাবে বাধ্য করে লেখার ওই অংশটুকু মুছে ফেলতে।’
কেএইচ/বিএ/এমকেএইচ