‘এভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়’
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারার কারণ হিসেবে বিএনপির ব্যর্থ নেতৃত্বকেই দায়ী করছেন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। তারা বলছেন, রাতে সমঝোতা, দিনে আন্দোলনের কথা বলছেন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের প্রতি গুরুত্ব দেয়াকে বিএনপির জন্য বিপদজনক বলে মনে করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের একটি হোটেলে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা এসব কথা বলেন।
এতে এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এদেশে নির্বাচন হয়েছিল- আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিএনপি এবং সবাই বললো এই নির্বাচন ভাউতাবাজির নির্বাচন, প্রহসনের নির্বাচন। আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলাম। এরপর গণশুনানি করলাম, বলা হলো আমরা সংসদে যাব না। কিন্তু কীভাবে কেন সংসদে গেল আজ পর্যন্ত জোটও জানে না এমনকি বিএনপিও জানে না। রাতে সমঝোতা হবে, আন্দোলনের কথা বলবেন এভাবে বেগম জিয়ার মুক্তি হবে না। আজকে খালেদা জিয়ার জন্য বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ প্রস্তুত। আগে তার দলকে চিন্তা করতে হবে। তারা আগে সঠিক পথে নেতৃত্ব দিক আমরা আছি এই আন্দোলনে।
তাবিথ আওয়াল বলেন, আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আর এই আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। বিএনপি নেতৃত্ব দিতে যদি ব্যর্থ হয়, জোটের নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। কারও জন্য অপেক্ষা করা দরকার নেই। আমরা আন্দোলনে যাব, আমরা সিদ্ধান্ত নেব কীভাবে তাকে মুক্ত করা যায়।
ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, সারাদেশে ভোট ডাকাতির নির্বাচন হলো, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলো। বলা হলো বিএনপি সংসদে যাবে না, সংসদেও গেল। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলো না। তাই বলছি গোঁজামিল দিয়ে যেমন খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, জয় বাংলা লোকদের দিয়েও হবে না।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) যুগ্ম মহাসচিব মহসিন সরকার বলেন, যারা আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জয় বাংলার লোকদের সাথে সমঝোতা করতে চাইছে, তারা আমাদের জন্য কালসাপ হতে পারে। কালসাপকে বিশ্বাস করা উচিত নয়। যেকোনো সময় ছোঁবল দিতে পারে।
শরিকদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, একযুগ ধরে বলছেন- আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। যেদিন থেকে খালেদা জিয়া জেলে গেলেন, সেদিন থেকে বলছেন "আমার নেত্রী আমার মা জেলে থাকতে দেব না"। আরে ভাই তোমার মাকে নিয়ে আসো না কেন? কয়দিন জেলখানার সামনে বসেছিলেন। কয়দিন সেখানে দিন কাটিয়েছেন?
তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো কিছু সফল হয়নি। কিন্তু আজকে যদি বলা হয় কয়জন এখানে আন্দোলনে ছিলেন। কেউ হাত দেখাতে পারবেন না। বেগম জিয়া যতবার আমাদের রাস্তায় ডেকেছে আমরা কেউ নামি নাই। এখন আর কেউ আমাদের বিশ্বাস করে না। আমরা যা বলি তা করি না, যা করি তা মানি না। বিএনপির উচিত তাদের জোটের শরিক দলগুলোর সাথে আলাদাভাবে বসা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ ভুলু বলেন, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের বক্তব্যের সহমত পোষণ করে বলতে চাই আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলখানায় আছেন, কিন্তু রাজপথের আন্দোলনে আমরা আজ পর্যন্ত জীবন উৎসর্গ করিনি। জেলখানায়ও যাইনি। অতঃএব আরও আত্মসমালোচনা মধ্য দিয়ে, আমাদের ২০ দলীয় জোটকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে যেন মুক্ত করতে পারি- এর জন শপথ নিতে হবে।
কারি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন- এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির যুগ্ম মহাসচিব মো. ফরিদ উদ্দিন, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আযহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদিকী প্রমুখ।
কেএইচ/বিএ