অর্থনীতির দাসত্বে মানুষ আবদ্ধ : আলাল
আবেগ কিংবা স্লোগাননির্ভর নয়, দেশপ্রেম ও বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনা করে রাজনীতিতে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে মুক্ত গণতন্ত্রের চেয়ে মুক্ত অর্থনীতি এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে যে সমাজতন্ত্রের অগ্রদূত বিজয়ী সেনাপতি হিসেবে চীনকে আমরা উদাহরণ হিসেবে দেখি। তারাও আজকে মিশ্র অর্থনীতির মধ্য দিয়ে প্রতিদিন গড়ে একজন করে কোটিপতি জন্ম দিচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনীতির দাসত্বের মধ্যে মানুষ আবদ্ধ হয়ে গেছে।’
রাজনীতিতে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার তিন যুগপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আলাল। ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
আলাল বলেন, ‘এখন কেউ আদর্শের জন্য জীবন দিতে চায় এ রকম লোকের সংখ্যা খুব কম পাওয়া যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে এইটা-বরং সমৃদ্ধির জন্য নিজেদের স্বার্থের জন্য জীবন দিতে চায়, তার প্রমাণ হচ্ছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন; তার প্রমাণ হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন; তার প্রমাণ হচ্ছে রোড সেফটির আন্দোলন।’
মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে যে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সে বিষয়ে আলাল বলেন, ‘যে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল শাহবাগে, সেখানে আমাদের যোগ দেয়া উচিত ছিল কিনা- অনেক বিলম্ব হলেও সেই প্রশ্ন করা দরকার নিজেদের।’
আলাল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জীবন, তার ত্যাগ, দেশের প্রতি তার দরদ, সেই দেশপ্রেমটাকে অক্ষুণ্ন রেখে বর্তমান প্রেক্ষিতকে বিবেচনা করে যেন রাজনীতিতে অগ্রসর হই, শুধু আবেগ কিংবা স্লোগাননির্ভর করে নয়।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সমুদ্রের মতো একটা বিশাল হৃদয়। সেই হৃদয়ের মধ্যে আমরা যখন যেভাবে পেরেছি, সেভাবে অবগাহন করেছি। কিন্তু উনাকে কতটা আমরা সুরক্ষিত করতে পেরেছি, উনাকে কতটা স্বস্তি দিতে পেরেছি, সেই প্রশ্ন আজকে সবার আগে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার বড় বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’
আলাল আরও বলেন, ‘এ জন্য রিসার্চ সেন্টারকে আমি বলব। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদৎবরণ, কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনা প্রত্যেকটি তাদের যে বয়সে হয়েছিল সেই বয়সে অনেকেই আজকে এখন ছাত্র রাজনীতি করেন। রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান হওয়া তো দূরের কথা। তারা এখনও ছাত্র রাজনীতি করেন। বিবর্তনটা কিন্তু এভাবে এসেছে, সে জন্য আমাদের মনে রাখতে হবে ৪৭-৪৮ বছরে জিয়াউর রহমান শহীদ হয়েছেন। ৫২ কিংবা ৫৩ অথবা ৫১ বছর বয়সে শেখ মুজিব নিহত হয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া কত বছর বয়সে দলের চেয়ারপারসন হয়েছিলেন?’
আলাল বলেন, ‘আজকে আমাদের এ প্রজন্মের সময় এসে দেখি ওই সময় আমাদের অনেকে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা ছাত্র ইউনিয়ন করে। ছাত্র রাজনীতি করে। এ ধারাবাহিকতার মধ্যে ঢুকতে হবে আমাদের। অ্যাডাপটেশন একটা বড় দরকার। আমি সম্মানিত মহাসচিবকে একটু আগে বলছিলাম, দেখুন প্রত্যেকটি রাজনীতির বাকে বাকে অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সারা পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এ তিনটি পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘কোন জায়গায় কোন পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তন অনুযায়ী যে রাজনৈতিক দল নিজেদের খাপ খাওয়াতে পেরেছে তারা কিন্তু দীর্ঘদিনের জন্য স্থবির হয়ে যায় নাই। সাময়িক স্থবির হয়েছে। আবার দাঁড়িয়েছে। যেমনটা আমরা একটা সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু এমন কি হলো যে-২০০৮ থেকে যেটা হলো-সেটা এখনও চলছে। বরং এটা আরও বড় হচ্ছে, আরও বড় হচ্ছে আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে। সে বিষয়ে চিন্তা করার সময় আমাদের এসেছে।’
ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক বাবুল তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, জয়যাত্রার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।
কেএইচ/এনডিএস/পিআর