‘দর-কষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৯
ফাইল ছবি

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দর-কষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে-আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে দলটির নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দর-কষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।

আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দর-কষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জানা যাবে বিএনপি থাকবে কি থাকবে না। আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই-বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের নিকট প্রতিষ্ঠিত। তিনি কখনো কোনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, কোনো স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। দর-কষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এরশাদের নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেইমান হবে বলে আপনার নেত্রী দর-কষাকষি করে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় বেইমানের মুকুট তিনি নিজেই নিজের মাথায় পরে ক্ষমতার হালুয়া-মোরব্বার ভাগ পেয়েছিলেন। কীভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেটিও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। অগণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের; বিএনপির নয়।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে সেটিই ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজ গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কারাগারে বন্দী। দেশের প্রতিটি মানুষ জানে এবং বিশ্ববাস করে খালেদা জিয়া নির্দোষ। দেশ থেকে আইনের শাসনকে সমাহিত করে পুলিশি শাসন কায়েম করা হয়েছে। আর এই অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির আশা-ভরসার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যাবে না।’

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে সমাজে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা ইতিহাসে সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বাসের যাত্রী, গৃহবধূ, মা-বোনসহ সমাজে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়। ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কারণে বর্তমানে সামাজিক ভায়োলেন্স এত তীব্র হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে “সোশ্যাল ফ্রেব্রিক”ভেঙে গেছে। রাজনীতিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাসনে। এই বিভৎস সামাজিক নৈরাজ্য ভোটারবিহীন সরকার, মধ্যরাতের সরকার, একদলীয় সরকার ও জবাবদিহিহীন সরকারের সর্বব্যাপী গুম-খুন-গুপ্তহত্যা-নির্বিচারের মামলা ও গ্রেফতারের কারণেই বিস্তার লাভ করেছে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব, অথবা এদের মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে, অথবা নিজেরাই অপকর্মে মেতে উঠেছে। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন নৈরাজ্যের এই কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে হেডলাইন হয়ে। আর এজন্য দায়ী অবৈধ মিডনাইট সরকার।’

অবৈধ মিডনাইট সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধর্ষণ-নারী নির্যাতন-খুন-দখল ও গুমের উৎসবে মেতে উঠেছে। দেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিনা ভোটের সরকার কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সব কিছু এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যায় আওয়ামী লীগের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সোনাগাজীর নুসরাতকে নিপীড়ন চালিয়ে তার মুখ বন্ধ করতে গায়ে আগুন দিয়ে বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় সেখানকার আওয়ামী লীগের মিডনাইট এমপি, আওয়ামী সভাপতি থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা জড়িত। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এসপি থেকে থানার ওসি পর্যন্ত। ফলে তাদের এমপি-নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সোনাগাজীর ঘটনার মতোই ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা গোটা দেশকে ধর্ষণ উপত্যকায় পরিণত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা এখন ইতিহাসে সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী নিপীড়ন ও খুন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ৭২-৭৫ এর চাইতেও এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ।’

ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গত মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুই মসজিদে হামলা এবং রোববার শ্রীলঙ্কায় গির্জায় ও সোমবার পুত্তালুম জেলায় মসজিদে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তির অন্তরায়। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, নাজমুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।