‘সেই অপেক্ষায়’ আছেন অলি
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছে’ বলে অভিযোগ বিএনপির অন্যতম মিত্র লিবারেল ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদের।
শনিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
অলি বলেন, ‘ড. কামাল সাহেবের সঙ্গে যারা আছেন তাদের অনেকে সরকারের কাছ থেকে পয়সা নিয়েছেন। কোন বাসায় বসে পয়সা নিয়েছেন, কে নেগোশিয়েট করেছেন- সেসব তথ্য আমার কাছে আছে। ২০ দলীয় ঐক্যজোটেরও অনেকে পয়সা নিয়েছেন। তা না হলে এভাবে আমাদের ওপর নির্যাতন হতো না।’
তিনি বলেন, ‘আজ পুলিশ দেশ চালাচ্ছে। তারা এমপি-মন্ত্রীদের কথা শুনছে না। কারণ পুলিশ বলে, তোরা এমপি হস নাই। এমপি তো আমরা তোদের বানিয়েছি, জনগণ তো তোদের এমপি বানায়নি।’
‘আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও রাতে ভোট দিচ্ছে’- এমন অভিযোগ করে অলি আহমদ আরও বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত হতে হবে। এজন্য সাহসী লোকের প্রয়োজন। সাহস নিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের যে অধিকার, যেটা হরণ হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখানে অমুকের দ্বারস্থ, তমুকের দ্বারস্থ হলে হবে না। নিজের যেটা আছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে আগামী এক বছরের মধ্যে এ সরকারকে নির্বাচন দিতে আমরা বাধ্য করতে পারব। এটা কঠিন কাজ নয়। ১৫০/১৬০ জন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে সংগ্রাম করলে, অচিরেই এ দেশে পুনরায় নির্বাচন অসম্ভব নয়।’
অলি আহমদ বলেন, ‘১৯ বার মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছি। এখনও বেঁচে আছি। নিশ্চয়ই কোনো কাজ আল্লাহ আমাকে দিয়ে করাবেন। সেই অপেক্ষায় আছি।’
‘রাজনৈতিক নেতৃত্বে নয়, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন লোকেরা বই লিখছে যারা যুদ্ধ দেখে নাই। যুদ্ধের মাঠ থেকে পালিয়ে গেছে তারাও এখন বই লিখছে। অনেক শিক্ষক যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানে না তারাও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বই লিখেছে।’
তিনি বলেন, ‘সত্য কথা হলো, সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রথমে যোগদান করেছে তৎকালীন ইপিআরের সদস্যরা, পুলিশ, ছাত্ররা। বিশেষ করে ছাত্র-শ্রমিক সেদিন যদি না আসতো, তাহলে আমদের পক্ষে দেশ স্বাধীন করা সম্ভব হতো না। একপর্যায়ে কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পরিশ্রম করেছে, আত্মত্যাগ করেছে। এটা শুধু কয়েকজন রাজনীতিবীদের কারণে হয় নাই।’
অলি বলেন, ‘ওই সময়ে যারা খাদ্যগুদামের দায়িত্বে ছিল, তারা এখন স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে। এখনও আমরা যারা জীবিত আছি, যুদ্ধের জন্য প্রাণ দিতে গিয়েছিলাম, আমাদের তো স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে না। কারণ দলের বাইরে কোনো কাজ হচ্ছে না। দলকে দিয়ে এভাবে যদি চলতে থাকেন তাহলে একদিন না একদিন বিপদে পড়বেন। আমি আশা করব, যারা সরকারে আছেন তারা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।’
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে অলি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের লোকেরা ন্যাক্কারজনক কাজটা করেছে। মানুষ ১০ জনের কাছে অভিশপ্ত হতে পারে, ১০ হাজার লোকের কাছে অভিশপ্ত হতে পারে, কিন্তু বর্তমান সরকার ১৮ কোটি মানুষের কাছে অভিশপ্ত। কারণ, ১৮ কোটি মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। তাদের বাঁচার অধিকার নেই। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নাই।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জন্য যে অবদান রেখেছেন, আমি বলব না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে বেশি রেখেছেন। তারা দুজনেই বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করেছেন। তাদের সম্মান করা উচিৎ। তাদের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রেখে, মিথ্যা কথা বলে দেশের লোককে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়।’
এলডিপি মহাসচিব ড. রোদোয়ান আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিম বীর প্রতীক, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন, গোলাম মাওলা রনি প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
কেএইচ/এমএসএইচ/জেআইএম