খালেদা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকা এক অসহায় নারী : রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ০৯ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

 

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনদের জন্য আধুনিক চিকিৎসার সব আয়োজনই মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন হয়। আর স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিণী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে দিনরাত কাটাতে হয় কীট-পতঙ্গে ভরা ধূলিধূসরিত অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। দেশের ভেতরে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত, বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকা এক অসহায় নারী। মনে হয়, এভাবে তাকে তিলে তিলে হত্যারই ষড়যন্ত্র করছে সরকার।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘দেশ এক ব্যতিক্রমী দুঃশাসনের মধ্যে নিপতিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বংসধারীরা মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারের আলোবাতাসহীন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রেখেছে। আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে জাতীয় সংসদে অনুগত বিরোধী দলীয় নেতা বানানো হয়েছে।

রিজভী বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীকে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত কারাগারের স্যাঁতসেঁতে কারা প্রকোষ্ঠে। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার রিক্রুটমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিসিকে করা হয়েছে নানাভাবে পুরস্কৃত। তাকে কখনও মন্ত্রী বা কখনও এমপি বানানো হয়েছে। রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে প্রতিহিংসাবশত সাজা দেয়ার জন্যই মিথ্যা মামলা বানিয়ে এখন কারাগারে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেও শুধু ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের আত্মীয় হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন মন্ত্রী ও এখনও এমপি করা হয়েছে একাধিক জনকে। অথচ বীর সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে কারাগারে যাপন করতে হচ্ছে দুর্বিষহ জীবন।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন,‘প্যান্ডোরার বাক্স থেকে এখন আসল ঘটনাগুলো বের হতে শুরু করেছে। থলের বিড়ালকে আর বেশিদিন আটকে রাখতে পারলেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। আসলে সত্যকে ঢেকে রাখলেও তাতে লাভ হয় না। সত্য কুহেলিকার আচ্ছাদন ভেদ করে বের হবেই। মিডনাইট নির্বাচনে আসল সত্যটি এখন সিইসি মুখ ফসকেই বলে ফেলেছেন। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া দস্যুতারই নামান্তর। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সেই দস্যুতারই আচরণ করেছেন সিইসি। ইভিএম চালু হলে নাকি ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির ঝুঁকি কমবে-এমন কথা বলেছেন সিইসি। জনগণের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কমিশনে ইভিএম মেশিন প্রকল্প অপরিহার্যতা প্রতিপাদন করার জন্যই কি সিইসি ২৯ ডিসেম্বর রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন? একটি প্রকল্পের যথার্থতা প্রমাণের জন্যই আপনি কি সারাদেশের ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিলেন? আপনার ব্রেইন চাইল্ড প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের আমানতকে আপনি কেড়ে নিলেন। আজ আপনার এবং আপনার সহচরদের মুখ দিয়েই আসল সত্যটি প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। অথচ আপনি ৩০ ডিসেম্বরের রাত থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের ঝুড়ি ঝুড়ি গালগল্প শুনিয়েছেন মানুষকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন,'মিডনাইট নির্বাচনের হোতা আপনি। আদর্শগত শূন্যতার কারণে আপনি এতবড় অন্যায়টি করেছেন জনগণের বিরুদ্ধে। এটি অবৈধ সরকারের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতি বাস্তবায়ন করতেই আপনি মহাভোট কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করলেন। আপনার এ বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকল জাতির কাছে। আপনি ২৯ ডিসেম্বর রাতে স্বচ্ছ জালিয়াতি ও মহাকারচুপির ভোট সেরে ফেলেছেন। তবে মনে রাখবেন-পাপ কখনও বাপকেও ছাড়ে না। আমজনতার কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতেই হবে।

সরকার এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনেও মিডনাইট ভোটের পদ্ধতি অবলম্বন করছে এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন,'গত পরশু দিন ঢাকা আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন নজিরবিহীন। ব্যাপকভাবে জালভোট প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সাত দিনের ব্যবধান করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের দিন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিএনপি প্যানেলের কমিশনার, যে ভোট গণনার দায়িত্বে থাকে, তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। তাছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে একজন কট্টর আওয়ামীপন্থী আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদলকে। নানাভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা জেলা বার সমিতির নির্বাচন। সরকার এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনেও মিডনাইট ভোটের পদ্ধতি অবলম্বন করছে। সাধারণ জনগণের মতো বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও এখন বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত। প্রহসনের পর প্রহসন এবং তামাশার নানা অভিনবত্ব অবলোকন করছে দেশবাসী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সুকোমল বড়ুয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।