খালেদাকে টানা-হেঁচড়া করে আদালতে নেয়া হচ্ছে : রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে টানা-হেঁচড়া করে আদালতে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থ শরীর। একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইলচেয়ারই ভরসা। তারপরও টেনে-হিঁচড়ে জবরদস্তি করে আনা হচ্ছে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ক্যাঙ্গারু কোর্টে।

রোববার দুপুরে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালত নামের কারাগারের আলো-বাতাসহীন ছোট্ট একটি রুমে এনে একঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। তার অসুস্থতা দিনে দিনে বাড়লেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে শেখ হাসিনা।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বর্ণনা করতে গিয়ে রিজভী বলেন, ‘তার আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। রিস্ট জয়েন্ট ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচণ্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। তার এই রকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও অমানবিকভাবে কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ছোট্ট অপরিসর কক্ষের ক্যাঙ্গারু আদালতে ঘনঘন হাজির করা হচ্ছে। মূলত বেগম জিয়াকে আদালতে হাজির করার নামে টানাহেঁচড়া করে নির্যাতন করা হচ্ছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও তিলে তিলে শেষ করে দেয়ার জিঘাংসা চরিতার্থ করে চলেছে সরকার। আইনজীবীরা বলছেন, কারামুক্ত হতে চারটি মামলায় জামিন পেতে হবে। এই অবৈধ সরকারের হাত যেহেতু আইনের হাতের চেয়ে লম্বা, তাই সব নির্ভর করছে মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রীর ওপর।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই-দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায় যার সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই, তাকে জেলখানা নামের ইঁদুর-তেলাপোকা ও পোকামাকড়ে উপদ্রব স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে আর আটকে রাখবেন না। ওই দুই কোটি টাকাতো সরকারের ছিল না। ছিল ব্যক্তিগত ট্রাস্টের। সেই দুই কোটি টাকা ব্যাংকে জমা আছে। তা এখন তিনগুণ বেড়েছে। বেগম জিয়ার সংশ্লিষ্টতাহীন দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার নজীর নেই, যেখানে ন্যূনতম আইনের শাসন আছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি অনুগ্রহ করে ফেরাউন-নমরূদ-হিটলার অথবা কল্পরাজ্যের হিরকের রাজাকে টেক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা করবেন না। জালিম এ সমস্ত শাসকরা আজও মানুষের মধ্যে ধিকৃত। দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় এক বছর তো কারারুদ্ধ করে রাখা অন্যায়, অবিচার ও জুলুম। মিথ্যা দণ্ড দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সাধ পূর্ণ করলেন, এবার মুক্তি দিন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী-আপনি দেয়ালের ভাষা পড়ুন। চারদিকের মানুষ চোখেমুখে কী বলছে বোঝার চেষ্টা করুন। পৃথিবীটা ক্ষণিকের। কিন্তু কর্মফল অনন্তকালের। এখনও সময় আছে। এক বছরে বহু নির্যাতন বহু কষ্ট দিয়েছেন বেগম জিয়াকে। চিকিৎসার সুযোগটুকুও দেননি। এবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।

সাবেক এই ছাত্রনেতার ভাষ্য, কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কেউ যখন শোনে দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলার অজুহাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে তখন তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। অনেকে এটাকে স্রেফ ক্ষমতার হিতাহিত জ্ঞানহীন নির্মম রসিকতা মনে করে।’

কেএইচ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।