দল পুনর্গঠনে বিএনপিতে নানা মত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে দল পুনর্গঠনের ডাক দেয়া হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অন্তত তিন নেতা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আমাদের মতো বর্ষীয়ান ও ব্যর্থদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ও মাঠে থাকা অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিয়ে দল পুনর্গঠন করতে হবে।’
এরপর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দলের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। দল পুনর্গঠন কোন প্রক্রিয়ায় হবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুনর্গঠন তো একটা দলের নিয়মিত প্রক্রিয়া। দলের একজন কর্মী হিসেবে আমি চাইব কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ে পুনর্গঠন হোক।’
‘কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাপারে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা তৈরি হয়েছেন। আশা করি তাদের মূল্যায়ন হবে, পাশাপাশি যারা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের দলের অন্যত্র রাখা হবে। অভিজ্ঞ ও নবীনদের সমন্বয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যে পদগুলো শূন্য রয়েছে তা পূরণের জন্য চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের নির্বাহী কমিটির সভা হওয়া দরকার। দলের পুনর্গঠনের বিষয়ে ওই ফোরামে আলোচনা হতে পারে। নির্বাহী কমিটির সভা ছাড়া দল পুনর্গঠন হয় কীভাবে? এটি করতে হলে কাউন্সিল দরকার।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘পুনর্গঠন নিয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে। অনেকে কাউন্সিলের কথা বলছেন। কিন্তু কাউন্সিলের বিষয়ে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সে বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির যেসব পদ শূন্য রয়েছে সেগুলো পূরণ করে পরবর্তীতে কাউন্সিল করার জন্য। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মাহাবুব হোসেন, সেলিমা রহমান, রাবেয়া চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক শাহিদা রফিক; এই নামগুলো আলোচনায় রয়েছে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের আমান উল্লাহ আমান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুদের এখন স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সময় এসেছে। এছাড়া দফতরে পরিবর্তন আনা দরকার। সেখানে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ওমর ফারুক শাফিনসহ কয়েকটি নাম আলোচনা হচ্ছে। সামনে ডাকসু নির্বাচন অথচ দলের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদ শূন্য। এ পোস্টে ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের নাম শোনা যাচ্ছে।
স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাওয়ার আলোচনায় থাকা সাবেক এক ছাত্রনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ নোমানদের আরও আগে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাওয়ার দরকার ছিল। শাহ মোয়াজ্জেম, সাদেক হোসেন খোকা- ওনার বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। আব্দুল্লাহ আল নোমান দলকে হয়ত আরও ৫/৭ বছর সার্ভিস দিতে পারবেন।’
‘এছাড়া স্থায়ী কমিটিতে যারা আছেন এবং যারা আলোচনায় আছেন অনেকেরই বয়স ৮০’র কোটায়। সিনিয়র যারা আলোচনায় রয়েছেন তাদের এই মুহূর্তে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেয়া দরকার। মার্চে কেন্দ্রীয় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হচ্ছে, তখন সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা দেয়া উচিত।’
দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের মহাসচিব পরিবর্তন করলেই তো সব সমস্যার সমাধান হবে না। মহাসচিব তো একাই সব সিদ্ধান্ত নেন না। স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মহাসচিব বাস্তবায়ন করেন। তবে মহাসচিব পদে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নাম আলোচনায় রয়েছে।’
গত ২৪ জানুয়ারি রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত ছিলেন।
বৈঠকে দলের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘তৃণমূল থেকে দল গোছানো হবে। আগামী মাসের মাঝামাঝি দিকে নির্বাহী কমিটির সভা। এছাড়া আগামী ৮ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) থেকে ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিতে দেয়া হবে।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/পিআর