গুলশানে বৈঠকে ধানের শীষের প্রার্থীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আজ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) স্মারকলিপি দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর আগে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছে ধানের শীষের প্রার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। তবে ড. কামাল হোসেন এখনও আসেননি।

ইসিতে স্মারকলিপি দেয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে সকাল থেকেই সারা দেশে থেকে কার্যালয়ে আসা শুরু করেন জোটের প্রার্থীরা। এর আগে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ, সহিংসতা, হামলা-মামলা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়াসহ নানা অভিযোগের কাগজপত্র নিয়ে জোটের সকল প্রার্থীদের বেলা ১২টার মধ্যে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তারা উপস্থিত হওয়ার পরই সকলকে নিয়ে বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠক শেষে বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশনের গিয়ে স্মারকলিপি দেবে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে বুধবার (২ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈঠকের পূর্বে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন দেশ গড়ার জন্য। তখন সেনাবাহিনী, বিডিআর, পিপিআর, পুলিশ সিভিল প্রশাসন আমাদের পক্ষে ছিল। ৫৪ সালে সব যুক্তফ্রেন্টর পক্ষে ছিল। এবারের নির্বাচন হলো “ঘরের শত্রু বিভীষণ”।’ তিনি বলেন, ‘ঘরে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আর অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মধ্যে পার্থক্য আছে।’

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে, গায়ের জোরে কোনো নেতার ইচ্ছায় আন্দোলন হয় না উল্লেখ করে রব বলেন, ‘আমরা এবার নির্বাচনে গিয়েছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। জনগণ এইটার উচিত জবাব দেবে বলে আমি আশাবাদী।’ পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচার সরকার যদি চিরস্থায়ী না হয়ে থাকে তাহলে এই সরকারও টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আ স ম আব্দুর বলেন, ‘আমি ৫৪ সালে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। এই পর্যন্ত সব নির্বাচন দেখেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন দেখেছি। ভোট ডাকাতি আমাদের আশপাশের দেশেও হয়। কিন্তু এমন জঘন্যতম এবং বেহায়াপনা ডাকাতির নির্বাচন আমি দেখিনি।’

জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণ ভোট দিতে চেয়েছিল কিন্তু ভোট ২৯ তারিখ রাতেই শেষ হয়ে গেছে। যেমন পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র শেষ, তেমনি ভোটের আগে ব্যালট পেপার শেষ। আমার এলাকায় কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। নির্বাচনের ১৫ দিন আগে থেকেই গ্রেফতার, হুমকি, নির্যাতন, অফিসে আগুন লাগানো শুরু হয় আমার এলাকায় এবং কর্মীরা নির্বাচনে সময় বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেব। হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৃশ্যমান ঘটনার বিষয়ে আমরা মাঠে জনগণের মতামত, সাক্ষ্য ও প্রমাণ নেব। বিশ্ববাসী, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের কাছে এগুলো তুলে ধরব। আমরা জনগণকে নিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিলাম এবং জনগণকে নিয়েই প্রতিহত করব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, ‘অনেক বুদ্ধিজীবীরা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে ভুল হয়েছে কিন্তু এবার কী প্রমাণিত হলো? আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠ থেকে উঠি নাই। অনেকে এখন প্রশ্ন করেন, আগে বুঝতে পারলেন নির্বাচন এমন হবে, তাহলে গেলেন কেন এমন নির্বাচনে? এবার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত না থাকলে জনগণ বলত আপনারা আবার আগের মতোই ভুল করেছেন।’

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি ৫টি আসনে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম দুটি আসনে জয়ী হতে পেরেছে। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আমিনুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে হারুনুর রশীদ জয় পেয়েছেন। গণফোরামের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-২ আসনে মোকাব্বির খান ও মৌলভীবাজার-২ আসনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর জয়ী হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এসেছি জনগণের অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরতে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটাই মেনে নেবেন বলে জানান তিনি।

কেএইচ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।