নয়াপল্টনে যা কথা হলো গয়েশ্বর-বিপুর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

হামলাকারীদের ‘অবুঝ’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিচার চাইবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দেখা করতে এলে তিনি একথা বলেন।

হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে বিপু বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত, যে দলেরই হোক না কেন খারাপ পরিস্থিতি প্রশ্রয় দেবো না।’

ঢাকা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একই আসনে নৌকার প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপু। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় হামলার শিকার হন গয়েশ্বর। ওই ঘটনার পর আজ (বুধবার) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গয়েশ্বরের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে আসেন বিপু। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন তিনি। পরে দুজনই গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন।

এ সময় গয়েশ্বর বলেন, ‘আমার একটা কনফিডেন্স ছিল কেরানীগঞ্জের বুকে কখনও কেউ আমাকে অসম্মান করবেন না। কারণ আমি আমার নিজের জীবনের সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে দলমত নির্বিশেষে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কেরানীগঞ্জের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক।

এই গণতন্ত্রের টানাপোড়েনেও আমরা চেষ্টা করছি ১০টা বছর, আমার পাশে বসা নসরুল হামিদ বিপু, মাননীয় মন্ত্রী আমার ছোট ভাই, কারণ আমরা ১০টি বছর বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো চলছি। আমরা একে অন্যের আমন্ত্রণে একসঙ্গে হয়েছি অনেকবার। কেরানীগঞ্জে আমরা উভয়ে উভয়ের ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের লোক আমার নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে সেটা একটা সাবজেক্ট।

কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুজনের মধ্যে কখনও ঝগড়াঝাটি হয়নি। এই কনফিডেন্সের ওপরই নির্বাচনটা করতে ছিলাম। কালকে যে ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনাটা আমার গাড়িতে ওঠার আগে, কিছু অতি উৎসাহী ছেলেপেলে থাকে, কখনও কখনও কোনো মিছিলে গোয়েন্দাদেরও লোক থাকে, তারাও কখনও কখনও কোনো ঘটনা ঘটিয়ে একটা নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। এবং আমি বিশ্বাস করি বিপু স্বীকার করবে যে, এখানে অতি উৎসাহী বা গোয়েন্দাদের কেউ থাকতে পারে নির্বাচনের আগে খারাপ পরিবেশ তৈরির জন্য, এটি হতেও পারে, নাও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ওদের নিবৃত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও আক্রমণের হাত থেকে আমি বাঁচি নাই। যা-ই হোক আপনাদের আশীর্বাদ, মা-বাবার আশীর্বাদ আমি বেঁচে আছি, এটাই বড় কথা। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আমার এই বয়সে এত রক্তপাতের পর আমার হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছানোর কথা নয়। ছুটির দিন ছিল, যানজট ছিল না, একটানে আসতে পারছিলাম। বেঁচে আছি, দোয়া করবেন। আর আমি এর বিচারও চাই না। যারা করছে তারা অবুঝ, তারা তাদের আবেগ, এই আবেগ রাজনীতির জন্য কতটুকু ক্ষতিকারক...।

অসুস্থ অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। নসরুল হামিদ আসছে আমাকে দেখতে আমি ধন্যবাদ জানাই তাকে সহানুভূতিশীল মনোভাবের জন্য। আমি তার পাশে অবশ্যই থাকবো, অতীতেও ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো, এখন তার দলের লোক অবুঝ, আবেগপ্রবণ সেটা তার দলীয় সিদ্ধান্ত নেবে। কখনও কাউকে মামলা মোকাদ্দমা দেওয়ার মত মনোভাব কখনও ছিল না, আমিও মন্ত্রী ছিলাম, সে কারণে আমি কারো বিরুদ্ধে মামলাও দিতে চাইবো না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আশা করি এর মীমাংসা হবে এবং আমি আরো আশা করি যে, নির্বাচন হবে, হবে না, ৩০ তারিখ পার হবে, ৩০ তারিখের পরে কেরানীগঞ্জের মানুষ সবাই, মিলেমিশে একসঙ্গে বাস করবো।’

গয়েশ্বরের বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা বিপুর কাছে জানতে চান হামলার ঘটনায় তিনি দায় এড়াতে পারেন কি না? এর জবাবে বিপু বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে জানতে পেয়েছেন যে, দাদার পরিবারের সঙ্গে আমাদের খুব নিবিড় সম্পর্ক। আমার বাবার সঙ্গেও উনি চলেছেন। বাবা বহুদিন ধরে কেরানীগঞ্জে রাজনীতি করছেন। আমার বাবা ওনার শিক্ষকও ছিলেন। সুতরাং আমাদের সঙ্গে ওনাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। রাজনীতির বাইরেও আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।

আমরা চাইছি, বিগত বছর যা হইছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ভুলে গিয়ে গত ১০ বছর আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করছি। আপনারা গণমাধ্যমে দেখে থাকবেন, ১০ বছর ছিল অন্যরকম কেরানীগঞ্জ এবং সেই কালচারটাই আমরা বজায় রাখতে চেয়েছি। আমি নির্বাচন করেছি দাদার সঙ্গে ২০০৮-এ। তখনও আমরা দুজনে একসঙ্গে একই পথে হেঁটে ভোট চেয়েছি এবং এটিই তো আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার আদর্শ। আমরা এটাই বজায় রাখতে চাই। গতকাল যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাই লজ্জিত এ বিষয়ে। আমরা চাই না এরকম হানাহানি করে কোনো নির্বাচনে হোক। চাই একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হবে। এখনও সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। দাদা আমার বাসায় কালকে যাবেন। উনি দীর্ঘদিন ধরে ওখানে রাজনীতি করছেন। আমাদের থেকে অনেক সিনিয়র এবং তিনি আমাদের গুরুজন।’

বিপু আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইতোমধ্যে কাল রাতে তিনজনকে ধরেছে। এসব ছেলে কোথা থেকে এলো, কারা আনলো, অনেক সময় অতি উৎসাহী যেটা দাদা বললেন, যে অতি উৎসাহী কিছু লোকজন আছে অথবা ষড়যন্ত্রের মধ্যে যারা জড়িত হয়ে অনেকে আছে অঘটন ঘটাতে চায় রাজনীতির পরিস্থিতি আরও নষ্ট করার জন্য।

আমরা দুজন রাজনীতি করবো, আমরা নির্বাচন করবো, এখন পর্যন্ত আমরা ভালো আছি। আমাদের পরিস্থিতি ভালো, কেরানীগঞ্জের পরিস্থিতি এখনও শান্ত। আমরা মনে করি যে, কোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতি মোটেও আমরা প্রশ্র য় দেবো না। আগেও কোনোদিন দেইনি, সে যে দলেরই হোক না কেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলবো তারা যেন ব্যবস্থা নেয়।’

কেএইচ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।