সেনাবাহিনীই এখন একমাত্র ভরসা : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর বাসায় হানা দিয়ে বাড়াবাড়ি করছে পুলিশ। অন্যদিকে বিজিবি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, হয়রানি করছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীই এখন একমাত্র ভরসা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

সোমবার বিকেলে পুরানো পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মাঠে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। ভোট দেয়া তো দূরের কথা কাউকে ঘরে ঘুমাতেও দেয়া হচ্ছে না। একদিকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হচ্ছে না অন্যদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসাও দেয়া হচ্ছে না। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের আইন থাকলেও হাইকোর্ট থেকে তাদের নির্বাচন করতে দেয়া হচ্ছে না। একমাত্র ভরসা যে স্বাধীনতার সময় অনন্য ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। তাদের কাছ থেকে দেশের মানুষ নিরাপদ পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রত্যাশা করে।

ড. কামাল বলেন, বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নত হয়নি বরং পুলিশের উপস্থিতি ও বাড়াবাড়ি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিজিবি ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। আশার কথা, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনকারী আমাদের গর্ব সেনাবাহিনী বিশ্বব্যাপী শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে সে ভূমিকাই প্রত্যাশা করে। দেশব্যাপী সে পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। দেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে নীলনকশা চলছে, সেটা গণতন্ত্রে ব্শ্বিাসী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর এটা হবে আত্মঘাতী। এমনটা হলে দেশ ও জাতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই মুহূর্তে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতেই দেয়া হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী আচরণ ততই বাড়ছে। পুলিশ অনেকটা প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ঐক্যফ্রন্টের কাউকে কোথাও সহ্য করতে পারছে না তারা। ক্ষমতাসীন সরকার ও একশ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তার আগ্রাসী ভূমিকা ও অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতনের মুখে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা দিশেহারা। এভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। নিরাপদে ভোট চাওয়ার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে রহস্যজনক আচরণ করা হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার পক্ষে বিদেশি এক সংস্থার ৩২ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ৩২ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সময়মতো ভিসা দেয়া হচ্ছে না। এতে ওই সংস্থার সবাই সময়মতো ভোট পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসতে পারবে কি-না, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড উদ্বেগ জানান।

সরকার কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অনতিবিলম্বে দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আইন করা হলেও পদত্যাগ গৃহীত না হওয়া, বরং আদালত কর্তৃক তাদের মনোনয়ন একের এক বাতিল হওয়া, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না, সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন না, মোটরসাইকেলের জন্য পাস বা স্টিকার ইস্যু করা যাবে না, একসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শনিবার এক নীতিমালা জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে এমন বক্তব্যের পর জনমনে নানা ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সব মহল থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি উচ্চারিত হলেও নির্বাচন কমিশন কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এ নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে হামলা-মামলা-নির্যাতন-গ্রেফতার, গুলি ও অগ্নিসংযোগের খতিয়ান তুলে ধরেন ড. কামাল। ঐক্যফ্রন্ট দাবি করে, গায়েবি মামলায় ২১ ডিসেম্বর সারাদেশে ৬৯ জন, এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের সিএসএফের দুজন সদস্য রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের প্রায় ৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‌‘থাকবো, ইনশাআল্লাহ্‌ থাকবো।’

শূন্য আসন নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘আমরা সেসব আসনে নতুন প্রার্থী দিতে নির্বাচন কমিশনকে আবেদন জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।

এআর/জেএইচ/এমকেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।