আব্বাস আসলেও ‘আড়ালে’ আফরোজা
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রথম পাঁচদিন নির্বাচনী এলাকায় কোনো পোস্টার না ঝুলালেও রোববার শাজাহানপুর ও রাজারবাগের কিছু কিছু স্থানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ধানের শীষের পোস্টার ঝুলানো হয়। এক্ষেত্রে 'আড়ালেই' রয়েছেন তার স্ত্রী ও ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। বুধবার সকাল পর্যন্ত আসনটিতে তার কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।
মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ ও পল্টন এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন থেকে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করছেন মির্জা আব্বাস। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
অপরদিকে খিলগাঁও, মুগদা ও সবুজবাগ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী।
ঢাকা-৮ আসনে স্বল্প সংখ্যায় চোখে পড়ে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পোস্টার
নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের পোস্টারে ইতোমধ্যে ঢাকা-৮ আসনের বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই মাথার ওপরে দেখা মিলছে রাশেদ খান মেননের সারি সারি সাদা-কালো পোস্টার। পিছিয়ে নেই ঢাকা-৯ আসনের নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীও। খিলগাঁও, মুগদা ও সবুজবাগের প্রায় সর্বত্রই উড়ছে সাবের হোসেন চৌধুরীর পোস্টার।
এদিকে নৌকার দুই প্রার্থীর পোস্টারে পুরো নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেলেও, পোস্টার ঝুলানোর দিক থেকে পিছিয়ে আছেন ধানের শীষের দুই প্রার্থী। মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসার আশপাশে কিছু পোস্টার ঝুলতে দেখা গেলেও ঢাকা-৮ আসনের অন্য কোথাও তার কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।
অপরদিকে আব্বাসের স্ত্রী আফরোজার কোনো পোস্টারই এখনও পর্যন্ত ঢাকা-৯ আসনের কোথাও দেখা যায়নি। নির্বাচনী পোস্টার না ঝুলালেও প্রচারণায় বেশ সরব রয়েছেন আব্বাস ও আফরোজা দু’জনই। তবে স্বামীর তুলনায় প্রচারণার দিক থেকে বেশ এগিয়ে রয়েছেন আফরোজা আব্বাস। অবশ্য ধানের শীষের এই দুই প্রার্থীই অভিযোগ করেছেন তাদের প্রচারণায় বিরোধী পক্ষ বাধা দিচ্ছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য গত ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর গত বুধবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে মতিঝিল অঞ্চলে বড়সড় একটা নির্বাচনী শোডাউন করেন মির্জা আব্বাস। এই নির্বাচনী শোডাউনে কোনো ধরনের বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ওই দিনই আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা বৌদ্ধমন্দির এলাকায় প্রচারণা শুরুর পর তাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দেয় বলে অভিযোগ করা হয়।
র্যালি করছেন ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস
এরপর বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রচারণায় বাধা দেয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি মির্জা আব্বাস অথবা অফরোজা আব্বাসের পক্ষ থেকে। তবে শনিবার সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে গণসংযোগে গেলে আব্বাসের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
এ বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি নেতা-কর্মীদের বাইরে রেখে বাজারে ঢুকি। একপর্যায়ে হঠাৎ দেখি একদল যুবক আমার নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটাচ্ছে। আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও আঘাত করার চেষ্টা করা হয়। আমার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাদের থামানোর চেষ্টা করে আহত হয়েছেন। এক কর্মীর হাত ভেঙে গেছে। তারা না থাকলে হয়তো আপনাদের সামনে কথা বলতে আসতে পারতাম না।’
‘হামলা হলেও আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাবো। চেষ্টা করব আমার সব ভোটারের কাছে পৌঁছানোর। না পারলে তা হবে নেহাত অপারগতা। আমার বাসায় লিফলেট পড়ে আছে, ওদের (আওয়ামী লীগের) লিফলেটে তো ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে। সরকারের যে বিরূপ আচরণ, তাতে তো নির্বাচনের ফলাফল অনুমেয়। তবুও আমি ভবিষ্যৎ বলতে চাই না’- যোগ করেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলেন, বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। আমরা ভোট দিতে যাব এবং আশা করব ভোটের প্রতিফলন বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আসবে।
রাশেদ খানের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে আছে ঢাকা-৮ আসন
এরপর রোববার ও সোমবার প্রাচরণায় বাধা দেয়ার কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলেও মঙ্গলবার আফরোজা আব্বাসের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিন গোড়ানে গণসংযোগে গিয়ে বিরোধী পক্ষের বাধা ও হামলার শিকার হন আফরোজা আব্বাস ও তার কর্মী-সমর্থকরা।
আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজার পক্ষ থেকে পোস্টার ঝুলানো ও নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হলেও তাদের কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন দু’জনই নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে প্রচারণায় আব্বাসের থেকে তার স্ত্রী অনেক এগিয়ে রয়েছেন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর থেকেও প্রচারণায় এগিয়ে আছেন আফরোজা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আব্বাস ও আফরোজার এক কর্মী বলেন, ভাই (আব্বাস) সেইভাবে প্রচারণা না চালালেও ম্যাডাম (আফরোজা) প্রচারণায় বেশ সক্রিয়। ম্যাডাম নিজে যেমন ভোটারদের কাছ যাচ্ছেন। তেমনি তার কর্মী-সমর্থকরাও আলাদাভাবে ভোট চাচ্ছেন। তবে ঢাকা-৯ আসটিতে নৌকার প্রার্থী বেশ শক্তিশালী। নির্বাচনে সাবের হোসেনের সঙ্গে ম্যাডামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অবশ্য আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত ম্যাডামই জয়লাভ করবেন।
ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীর পোস্টার
ঢাকা-৮ আসনের বিষয়ে আব্বাসের ওই কর্মী বলেন, আব্বাস ভাই আগে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ঢাকা-৮ আসন থেকে এবারই তিনি প্রথম নির্বাচন করছেন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেনন। আমাদের বিশ্বাস ভাই বিপুল ভোটে রাশেদ খান মেননকে পরাজিত করবেন। কারণ এ আসনে মেননের তেমন জনপ্রিয়তা নেই, তবে নৌকা প্রতীকের কারণে তিনি কিছু ভোট পাবেন।
পোস্টার ঝুলানোর বিষয়ে সোহেল নামের আব্বাস ও আফরোজার এক সমর্থক বলেন, পোস্টার ঝুলাতে গেলেই আমাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। যেই পোস্টার ঝুলাতে যাচ্ছে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক ২৪ ডিসেম্বরের পর নির্বাচনী এলাকায় আব্বাস ভাই ও ম্যাডামের পোস্টার দেখতে পারবেন। কোনো বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না।
এমএএস/এমএমজেড/আরআইপি