ইসির ভূমিকা যথেষ্ট নিরপেক্ষ নির্মোহ : এইচ টি ইমাম
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ভূমিকা যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
অপরদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলাকে দলটির মনোনয়ন বাণিজ্যের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ইসিকে জানিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে ইসির মূল্যায়ন করছে এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, আমি বলব নির্বাচন কমিশন এখনও যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন- আমরা বৃহত্তর দল যাতে তাদের সহযোগিতা করি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা তাদের (বিএনপি) মনোনয়ন বাণিজ্যের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসার যে ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপরই বেশি হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, ইতোমধ্যে আমাদের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন। এরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তৃণমূলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। কাজেই বেছে বেছে তাদের ওপরই আক্রমণ করা হচ্ছে, এটা আমরা নির্বাচন কমিশনকে অভিহিত করেছি।
'নোয়াখালী ও ফরিদপুরে আমাদের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছে। মাহী বি. চৌধুরী গাড়িরবহরে হামলা- এটিই তার প্রমাণ। মহাজোটের অন্যান্য সহযোগিদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে।'
'এ ছাড়া পটুয়াখালী, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জের সিংরা, গাঙ্গী, মেহেরপুরের শাহাজাদপুর ও নরসিংদী জেলায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। এগুলো নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের আমরা অনুরোধ করেছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন ইসির কর্তৃত্বাধীন। আপনারা তাদের ব্যবহার করুন, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে',- বলেন এইচ টি ইমাম।
এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব বা ব্যর্থতা দেখছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, এটা ব্যর্থতা বলব না। তাদেরই আমরা সতর্ক করলাম। তাদের আমরা বলেছি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এখন তো চিহ্নিত করা সহজ। এখন তো এসব ঘটনার ছবি পাওয়া যায়। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।
তিনি বলেন, তাদের (ইসি) কাছে তো অন্যরা অন্যভাবে বিষয়গুলো বলেছেন। যেমন- বিএনপির সহাসচিব ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে তারা পুলিশকে খবর দিয়ে সেখানে যায়নি। পুলিশেরও জানা ছিল না। স্থানীয়ভাবে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশান অফিসে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। তারই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের ওখানেও। ওখানে তাদের দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। অথচ বিশেষ একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। এরকম ভুল হওয়া উচিত না। এরকম খবর যাচাই-বাছাই করে নিলেই হয়। এখন তো খোঁজ-খবর নেয়া সহজ। কোনো একটি পত্রিকায় এরকম ঘটলে অন্যরা প্ররোচিত হন। উৎসাহী হন।
'কিন্তু নির্বাচনের আগে এই সময়ে নানারকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য মিডিয়ার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে এ ধরনের বিষয় যাতে যাচাই-বাছাই করে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। এমনভাবে পরিবেশন করে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে মিথ্যা ও গুজব তথ্য প্রচার করে সম্প্রাদায়িক সম্প্রতি যেন নষ্ট না করেন।'
নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে হত্যার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, প্রথমে তার চোখে মরিচের গুড়া দেয়া হয়েছে। পরে তার মাথায় ইট দিয়ে থেঁতলে থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে পরিশেষে তাকে গুলিও করা হয়েছে। এগুলো কোন ধরনের কাজ! এগুলোতে আমরা ২০১৩-১৪ তে দেখেছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর লোকদের দেখেছিলাম। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।
এইচএস/জেডএ/এমএস