বিরোধ ভুলে প্রচারে আ.লীগ, আতঙ্ক কাটেনি বিএনপিতে
চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলই। প্রচারণার প্রথম দিনে চট্টগ্রামের প্রায় সব আসনেই মাঠে নেমেছেন ‘নৌকার’ প্রার্থীরা। বিভেদ ভুলে সেই প্রচারে অংশ নেন অধিকাংশ নেতা। তবে বিএনপির প্রার্থীদের সবাই এখনও প্রচারণায় নামেননি।
মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে থাকা ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণায় ফিরছেন ধীরে ধীরে। মঙ্গলবার সকালে হযরত শাহ সুফি আমানত খান (রহ.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
বিরোধ ভুলে প্রচারে আ.লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের শুরুতেই পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে মাঠে নেমেছেন নগর ও জেলার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা। পাশাপাশি যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ নানান শ্রেণি ও পেশার মানুষও নেমেছেন প্রচারণায়।
গতকাল বক্সিহাট ও পাথরঘাটা ওয়ার্ডসহ কোতোয়ালি আসনের বিভিন্ন এলাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ সময় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোলাকুলি এবং তাদের জড়িয়ে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চান।
নওফেলের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামসহ বিভিন্ন স্তরের আওয়ামী লীগ নেতারা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনে পটিয়া ইন্দ্রপুলের একটি কমিউনিটি সেন্টারে তৃণমূল কর্মী সমাবেশ করেন ‘নৌকা’র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। সমাবেশে অতীতের সব মতভেদ ভুলে যোগ দেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দলীয় কোন্দল ও বিভেদ ভুলে একই মঞ্চে ওঠেন আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে থাকা এমপি সামশুল হক চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাছির এবং সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব। সমাবেশে থেকে ওই তিন নেতা নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, বিবেধ ভুলে গতকাল চট্টগ্রাম-১০ আসনের নৌকার প্রার্থী ডা. আফসারুল আমিনের সমর্থনে যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওতাধীন ওয়ার্ড যুবলীগের উদ্যোগে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আনোয়ারা বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া মাজার জেয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। বাঁশখালী পৌরসদরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নৌকা প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সমর্থনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রেফতার আতঙ্ক কাটিয়ে মাঠে ফিরছে বিএনপি
দীর্ঘদিন মাঠছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে প্রচারণায় ফিরছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, সোমবার রাতেও নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপরও প্রথম দিনে গ্রেফতার আতঙ্ক উপেক্ষা করে বিপুল নেতাকর্মী তাদের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম নগরের বাইরে উপজেলাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারেনি বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা। সেখানে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার সকালে ছোটপুল এলাকার শাপলা কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রচার শুরু করেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের বিএনপিপ্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দুপুরে জেলে থাকা চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের বিএনপিপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। বিকেলে পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকায়ও গণসংযোগ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি হেঁটে-হেঁটে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি এবং অলি-গলিতে ছুটে যান। ভোটারদের সঙ্গে মেলান হাত, টেনে নেন বুকে। দলীয় প্রতীক ধানের শীষে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত নেতাকার্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয় পুরো এলাকা। গণসংযোগকালে প্রচারপত্রও ভোটারদের মাঝে বিলি করেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপিপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান মঙ্গলবার বিকেলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াসা মোড়, বাগঘোনা, হাইলেভেল রোড ও লালখান বাজার এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালান।
এদিকে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি শাহাদাতের পক্ষে হোটেল টাওয়ার ইন পর্যন্ত র্যালি করেন এবং ভোট চান। পরে জামালখাল খান ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্পটে ডা. শাহাদাতের পক্ষে নেতার্মীরা গণসংযোগ করেন।
চান্দগাঁও-বোয়ালাখালী আসনের প্রার্থী আবু সুফিয়ানের আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু হয় আজ থেকে। সকাল ১০টায় নগরীর বহদ্দারহাট হক মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হয় তার গণসংযোগ। গতকাল চান্দগাঁওয়ে কর্মী সভা করেন তিনি।
তবে শহরের বাইরের আসনগুলোতে বিএনপিপ্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে থাকা নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া। নির্বাচন সামনে রেখে তারা সবাই এলাকায় ফেরার অপেক্ষায়। মাঠের অবস্থা দেখে নেতাকর্মীররা প্রচারণায় নামবেন। তবে শহরে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন।
আবু আজাদ/এমএআর/আরআইপি