৪-১ এ খালেদার প্রার্থিতা বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১১ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপিল শুনানিতেও বাতিল হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় আপিল শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন এ তথ্য জানায়।

খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কেবল কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে মত দেন। তবে ভিন্ন মত পোষণ করেন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাহাদাত হোসেন। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা তিন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ফলে ৪-১ ব্যবধানে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ হয়ে যায়।

তিন আসনেই আপিল খারিজ হওয়ায় নির্বাচন করতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে তার।

শনিবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের শুনানি পেন্ডিং (স্থগিত) রাখেন নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগ। আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় এর আগে খালেদার জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। পরে প্রার্থিতা ফেরত পেতে আপিল করেন খালেদা জিয়া।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে যারা আপিল করেছেন তাদের বিষয়ে আজ (শনিবার) শেষদিনের মতো নির্বাচন কমিশনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আজ মোট ২৩৩ জনের আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিল শুনানিতে খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনের প্রার্থিতা ফেরতের আবেদন যথাক্রমে ৩৮৫, ৪৪০ ও ৪৭৮ নম্বর শুনানির তালিকায় ছিল।

শুনানির তালিকায় আসার পর নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগ এ বিষয়ে আজ (শনিবার) বিকেল ৫টায় শুনানি হবে বলে পেন্ডিং রাখে। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির দুই মামলায় একটিতে ১০ বছর ও অন্যটিতে সাত বছরের দণ্ড নিয়ে কারাগারে রয়েছেন।

শনিবার দুপুর ১টারর দিকে (১২টা ৫৮ মিনিট) নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী এজলাসে খালেদা জিয়ার তিন আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে রায় পেন্ডিং রাখেন কমিশনাররা।

শুনানি শেষে ওই সময় খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে আদেশ দিয়েছেন আইনের দৃষ্টিতে তা বৈধ নয়, এটা অবৈধ। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন তা অনুধাবন করতে পারছেন। বিকেলে যথাযথ ও আইনগত আদেশ দেবেন। আশা করি, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আর্টিকেল ১২/১ ঘ অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। আমরা শুনানিতে বলেছি, রিটার্নিং কর্মকর্তা যে কারণ দেখিয়েছেন, ওই আইন অনুসারে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল সঠিক হয়নি। কিন্তু সেটাই করা হয়েছে। আমরা সেসব কারণে আপিল করেছি।

‘নির্বাচন কমিশনে আমরা আইনের বিস্তারিত দিক তুলে ধরেছি। নির্বাচন কমিশন সব শুনে অন্যান্য মামলার মতো এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা বিকেল ৫টার দিকে তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত জানাবেন’ -বলেন তিনি।

জয়নুল আবেদীন বলেন, সাংবিধানিক অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো সুযোগ নাই। আইনগতভাবেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ১২/১ ঘ-তে নির্বাচন-সংক্রান্ত অপরাধের কথা লেখা রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধী হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া তো এখনও শুরুই হয়নি। এখনও খালেদা জিয়া মার্কা নিয়ে রাস্তায় নামেননি। তাহলে নির্বাচন-সংক্রান্ত অপরাধ করার সুযোগই তৈরি হয়নি। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া এমন কোনো অপরাধ করেননি যে, নির্বাচন-সংক্রান্ত বিধান দিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়।

কমিশন কী তাদের কোনো কনফিউশনের কথা বলেছেন, যেটি আরও পর্যবেক্ষণের দরকার রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এমন কিছু তারা বলেননি। এখন প্রসেস হচ্ছে, ভেরি ইনিসিয়াল স্টেজ। এ অবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কী আদেশ দিয়েছেন শুধু সেটার ওপরই নির্বাচন কমিশন আদেশ দিতে পারবেন। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, “১২/১-এর ‘ঘ’ অনুসারে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। সেখানে যেসব সেকশন রয়েছে সেসব কানেক্টেড নির্বাচনী আচরণ-সংক্রান্ত।”

উদাহরণ টেনে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে যেমন- আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করলাম, নির্বাচনী প্রসেস শুরু হলো, কাউকে মারধর করলাম, কাউকে গুলি করলাম, ভোট কেন্দ্রে অরাজক অবস্থা তৈরি করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলাম- এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিধিতে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়। এখনও সে অবস্থাই তৈরি হয়নি।’

নির্বাচন কমিশনের পুনঃতফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন।

জেইউ/জেএইচ/এমএআর/জেআইএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।