ভিআইপি চিকিৎসক তবুও তাদের ঠাঁই হলো না তরীতে!

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:৪৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা (তরী) প্রতীকে নির্বাচন করার আশা পূরণ হলো না বেশ কয়েকজন ভিআইপি চিকিৎসকের। পেশাদার চিকিৎসক ও চিকিৎসকদের রাজনীতিতে দিকপাল এসব চিকিৎসকরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিগত দুই এক বছর এলাকাতে সভাসমাবেশ করে তৃণমূলের জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কও গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা তাদের আসনে অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন।

ভিআইপি এসব চিকিৎসকদের তালিকায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর সভাপতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সভাপতি ও মহাসচিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর সাবেক উপাচার্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকসহ অন্যান্য অনেকেই রয়েছেন। তাদের মধ্যে দু-একজন নিশ্চিত ছিলেন মনোনয়ন প্রদানে প্রতিযোগিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারাই মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তরীতে ঠাঁই হয়নি তাদের।

ঢাকা-৭ আসনে বিএমএ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। গতকাল শনিবারও তিনি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, তিনিই যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু আজ ঢাকা-৭ আসনে দুজনের নাম ঘোষিত হলেও সেখানে তার নাম নেই! ঢাকা-৭ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের নাম রয়েছে। ডা. জালাল গতবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এ আসন থেকে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. সেলিমের কাছে পরাজিত হন।

চিকিৎসক হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপালদত্ত (কুমিল্লা-৭) মনোনয়ন চাইলেও সেখানে অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ মনোনয়ন পেয়েছেন। সাবেক উপাচার্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পরীক্ষিত নেতা অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান (টাঙ্গাইল-৩) থেকে মনোনয়ন চাইলেও সেখান থেকে আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। রাজবাড়ী-২ আসনে স্বাচিপ সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও মনোনয়ন পেয়েছেন মো. জিল্লুল হাকিম।

স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ (ময়মনসিংহ-৪) থেকে মনোনয়ন চাইলেও এ আসনে আওয়ামী লীগ আজ কারও নাম ঘোষণা করেনি। এ আসনটি বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদকে ছেড়ে দিয়েছিল। এবারও তাই করা হবে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক (কিশোরগঞ্জ-২) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ।

আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু (মুন্সিগঞ্জ-১) এ মনোনয়ন চেয়েছেন। এ আসনে আজ মনোনয়ন ঘোষণা হয়নি। এ আসনটি বিকল্প ধারাকে ছেড়ে দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

তবে ভিআইপি চিকিৎসকদের মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক (সাতক্ষীরা-৩), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), ডা. হাবিবে মিল্লাত সিরাজগঞ্জ-২ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে ভিআইপি না হলেও ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ সিরাজগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আরও কয়েকজন চিকিৎসকও মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তারা ভিআইপি নন।

মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার নির্বাচন আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির পক্ষের দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ তথা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দল যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় মন খারাপ হলেও কিছুই করার নেই। দলীয় সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে তারা মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার প্রচারণায় নামবেন বলে জানান।

নির্বাচনের নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১০ ডিসেম্বর।

এমইউ/জেএইচ

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।