কাল-পরশুর মধ্যে মহাজোটের আসন বণ্টন
মহাজোটের শরিকদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আগামী দু’দিনের মধ্যে। অর্থাৎ আগামীকাল রোববার ও পরশু সোমবারের মধ্যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দলের আসনসহ শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন। বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে জোট-মহাজোটের উইনেবল (বিজয়ী) প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে ইতোমধ্যে কথা বলছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা বারবার চাপ সৃষ্টি করছেন আসন ভাগাভাগির জন্য। কারণ প্রার্থী চূড়ান্ত না হলে মানসিক চাপ কমছে না। ভোট করার জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতিরও প্রয়োজন।
বিশেষ করে ১৪ দলের শরিকরা আরও আগে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে বলেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি না হওয়ায় তাদের মানসিক চাপ কমছে না। ফলে মাঠেও নামতে পারছেন না তারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গণভবনে যান প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য। গত মঙ্গলবার বিকল্পধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল মান্নান গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা আসন ভাগাভাগির কাজটি সেরে ফেলতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দেখছেন। তিনি জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। জোটের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের মতামত জানিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। শরিকরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে এসেছেন। দু-একদিনের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে সব চূড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি। আশা করি, আমরা যে তালিকা দিয়েছি সে তালিকা অনুযায়ী আসন পাব।
জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, আমরাও অপেক্ষায় আছি। ইতোপূর্বে আমাদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো দেখছেন। জরিপ অনুযায়ী উইনেবল প্রার্থীকে তিনি মনোনয়ন দেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক বৈঠকে এ বিষয় স্থির করেছে দলটি। জোট শরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শরিক দলগুলোর বাড়তি চাহিদার ব্যাপারেও ভেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রয়েছেন ৩৫ জন। নির্বাচনে ৩৫ আসনের বাইরে অতিরিক্ত সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে জাতীয় পার্টিকে। পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের এলাকার ক্ষেত্রেও। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৭৬টি আসন দাবি করেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৭, ফেনী-৩, গাইবান্ধা-৩ ও লালমনিরহাট-৩ এই আসনগুলোতে অতিরিক্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হতে পারে।
অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। যদিও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩৮টি আসনের তালিকা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের হিসাব অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ-১ ও ৩, নোয়াখালী-৪ অথবা লক্ষ্মীপুর-৪, সিলেট-৬ এ সকল আসনগুলোতে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে হতে পারে মহাজোটের হিসাব-নিকাশ।
মহাজোটের সঙ্গে থাকা জাকের পার্টিকেও একটি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ও প্রবীণ নেতার কপাল পুড়তে পারে। ইসলামী ঐক্যজোটের জন্যও একটি আসন ছাড়া হতে পারে। যিনি মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রয়াত এক নেতার ছেলে। ওই আসনটিতে বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছে।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির পক্ষ থেকে সর্বশেষ ১০টি আসন দাবি করা হলেও তাদের ছয়টি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। যে সব আসনে ইতোমধ্যে তাদের সংসদ রয়েছে সেই আসনগুলোই তাদের ছাড় দিতে চায় আওয়ামী লীগ।
পুনঃতফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর।
এফএইচএস/এমএআর/এমএস