মনোনয়ন নিয়ে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:০৯ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৮

রাজনীতিতে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। তবে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন তা নিয়ে রাজনীতিতে চলছে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। এছাড়া মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট উভয়ই বলছে জোটগতভাবে প্রার্থী ঘোষণার কথা।

আওয়ামী লীগ বলছে, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার পর ২৭ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হতে পারে। তবে ঐক্যফ্রন্ট এ ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল ভূমিকায়। সব মিলিয়ে দুই জোট থেকে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তা চূড়ান্তভাবে জানতে পাঁচ-সাতদিন অপেক্ষা করতে হবে।এ কারণেই ভোটের মাঠে কিছুটা স্থবিরতা এনেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের পর থেকে গণমাধ্যমে একের পর এক প্রার্থীর প্রার্থিতা নিশ্চিতের খবর প্রকাশ হতে শুরু করেছে। কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা এরই মধ্যে অনেকটাই জানাজানি হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দলীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড কয়েক দফা বৈঠক করে ১৭ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। এরপর ১৪ দলের শরিকদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এখন দর-কষাকষি হচ্ছে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম থেকে একটি আসন বেশি পেতে পারে। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামের অন্তত দশটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন পাওয়ার সবুজ সংকেত পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও চট্টগ্রাম-১৫ (বাঁশখালী) আসনে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বাঁশখালীতে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মজিবুর রহমানেরও সম্ভাবনা আছে বলে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের কপাল যে পুড়ছে তা প্রায় নিশ্চিত।

এ ছাড়া সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম-৪) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের বদলে তার চাচা ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন। যদিও তিনি চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে নিবন্ধনহীন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যকরী কমিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের নেতারা। এখানে বেশ কয়েকজন নতুন ও তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন পেতে পারেন। ২৩ দলীয় জোট ও মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কারণে এ পরিবর্তন আসছে বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া প্রতিটি আসনে বিকল্প রেখেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানান নেতারা।

তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির সিনিয়র নেতারা স্ব স্ব আসনে নির্বাচন করবে এটি প্রায় নিশ্চিত। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) ও চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে শীর্ষ চার নেতা দলীয় ফরম সংগ্রহ করলেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সে বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা তাদের। তবে কোনো প্রার্থী দুই আসনে নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন না এটা প্রায় নিশ্চিত।

বিএনপি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে জোট শরিকদের সর্বোচ্চ তিনটি আসন ছাড়াতে রাজি বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতের নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলামের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।

গণফোরামের পক্ষে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নির্বাচন করতে চান সুব্রত চৌধুরী। কিন্তু জোটের সমন্বয়ক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের কারণে তাকে ঢাকা-৬ আসনে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হতে পারে। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ২৩ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক মনোনয়ন পেতে জোর দাবি জানালেও এ আসনে বরাবরই শক্তিশালী বিএনপি। রয়েছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, প্রতিটি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর সঙ্গে ডামি হিসেবে এক বা দুজনকে রাখা হবে। কারণ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মামলায় বেশ কয়েকজন নেতা বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। যাদের অনেকেই এখনও কারাগারে রয়েছেন। তাই কোনোভাবে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে বিকল্প হিসেবে এসব প্রার্থী কাজে লাগানো হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার মনে করেন, ‘প্রতিটি দলই মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে নিজেদের শেষ প্রস্তুতি ও রণকৌশল ঠিক করে নিচ্ছে। তাই নির্বাচনী মাঠে এখন ঝড়ের আগ মুহূর্তের অবস্থা বিরাজ করছে। কৌশলের অংশ হিসেবেই দলগুলো প্রার্থীদের নাম ঘোষণায় সময় নিচ্ছে। নাম ঘোষণা হলেই প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আশা করা হচ্ছে দেশে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জমজমাট ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

আবু আজাদ/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।