‘হেভি টেনশনে’ হেভিওয়েট চিকিৎসকরা
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার টিকিটে নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক অর্ধশতাধিক চিকিৎসক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি, বেসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
কেউবা আবার চিকিৎসক রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। তাদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতি তথা নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পাবেন কি না- তা নিয়ে ‘হেভি টেনশনে’ রয়েছেন তারা। জল্পনা-কল্পনারও শেষ নেই তাদের।
জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা মাত্র ৩০০ হলেও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন চার সহস্রাধিক নেতা। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ভিআইপি চিকিৎসকদের টেনশনও যেন হেভি হচ্ছে। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, সিনিয়র মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তালিকায় নিজের নামটি আছে কি না- জানতে চাইছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক ভিআইপি চিকিৎসক বলেন, তাদের আসনে কাকে মনোনয়ন দেয়া হলো তা না জানা পর্যন্ত মহা-টেনশনে আছেন। তবে তারা সবাই বলছেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে সবাই কাজ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন।’
চিকিৎসক হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপালদত্ত (কুমিল্লা-৭), আরেক সাবেক উপাচার্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পরীক্ষিত নেতা অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান (টাঙ্গাইল-৩), বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (ঢাকা-৭), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান (রাজবাড়ি-২), স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ (ময়মনসিংহ-৪), স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক (কিশোরগঞ্জ-২), আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু (মুন্সিগঞ্জ-১) মনোনয়ন চেয়েছেন।
এছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক (সাতক্ষীরা-৩), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি (চাঁদপুর-৩) ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান (জামালপুর-৪) মনোনয়ন চেয়েছেন।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান মনোনয়নপত্র কিনেছেন টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে। এছাড়া আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রার্থী হতে চান কুমিল্লা-৭ আসনে, বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ি-২ আসনে, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ ময়মনসিংহ-৪ আসনে, নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা-৭ আসনে (তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য), স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক কিশোরগঞ্জ-২ আসনে, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম টাঙ্গাইল-৮ আসনে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি চাঁদপুর-৩ আসনে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাতক্ষীরা-৩ আসনে, ডা. আমজাদ হোসেন দিনাজপুর-৪ ও ডা. হাবিবে মিল্লাত সিরাজগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
এছাড়া অধ্যাপক ডা. আব্দুর রউফ সরদার, ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. দিলীপ রায় ও ডা. এম নজরুল ইসলামসহ যারা মনোনয়ন নিয়েছেন তারা সকলেই আশাবাদী। তবে ভিআইপি চিকিৎসকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন না। কারণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে যে সকল দল রয়েছে তাদের উপযুক্ত অনেক প্রার্থী সেসব আসনে রয়েছেন।
তবে আওয়ামী চিকিৎসকদের তুলনায় বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে যারা নির্বাচন করতে চান তাদের টেনশন একটু কম। বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, বিএনপির পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল কবির লাবু, ড্যাবের সহ-সভাপতি ডা. মাজহারুল আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, বিএনপির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. শহিদ হাসান, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানা, ডা. সারোয়ার।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।
এমইউ/এমএআর/আরআইপি