নৌকার মাঝি বাছাইয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে আ.লীগ

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৮
নড়াইল-২ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা এখন দলীয় মনোনয়ন যাচাই-বাছাই নিয়ে ব্যস্ত। মনোনয়নে যেন ভুল না হয় সে কারণে বিভিন্ন দিক চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট বারবার পর্যালোচনা করছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের বৈঠকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মনোনয়নের জন্য উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা, দলের প্রতি ত্যাগ, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকাসহ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মতো মুখকে মূল্যায়ন করছে আওয়ামী লীগ। দলের কোনো ছোট নেতা বা বড় নেতা দেখা হবে না। যাদের সম্পর্কে ভালো রিপোর্ট রয়েছে তাদেরকে মূল্যায়ন করবে বোর্ড। এ ছাড়া এমপি হিসেবে এলাকায় যাদের সুনাম রয়েছে, যারা দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন, দলকে বিভক্ত করেননি, কোন্দল সৃষ্টি করেননি, টিআর-কাবিখা-কাবিটার অর্থ যারা সুন্দরভাবে বণ্টন করেছেন -এক কথায় এলাকায় যারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট (বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য) তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে।

সংসদীয় বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র হিসেবে দলের যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথচ এমপি পদে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে না।

সূত্র আরও জানায়, যেহেতু এবার বিএনপিসহ প্রায় সকল দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে সে কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এ জন্য সংসদীয় বোর্ডে যারা আছেন তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করছেন। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে এমপি-মন্ত্রী থাকা অবস্থায় জনগণ থেকে যারা বিচ্ছন্ন হয়ে গেছেন তারা মনোনয়ন পাবেন না।

সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে যেসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অনাস্থা রয়েছে বা আনা হয়েছে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। অনেক এমপি এলাকার সঙ্গে সম্পর্কহীন, নানা কারণে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করে বিপর্যস্ত করেছেন। পাশাপাশি তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের ভেতর দল-উপদল সৃষ্টি করেছেন, আত্মীয়-স্বজনদের লাগামহীন আচরণ ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন -এবার তাদের কপাল পুড়বে।

তারা আরও জানান, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। কার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়গুলো সত্যি না বানোয়াট সেগুলো পরখ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাভোটে ডারা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা অনেকেই এলাকায় পা দেননি। আবার কারও স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই, ভাগ্নে, শ্যালক, শ্বশুরকে দিয়ে এলাকায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এসব আত্মীয়-স্বজন টিআর, কাবিখা, কাবিটা ভাগ বাটোয়ারাসহ টেন্ডারবাজি, হাটবাজার, বালুমহল ইজারা ও দখলসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আবার ভিন্ন দল থেকে আসা বিতর্কিতদের বা আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত করা হয়েছে ত্যাগী ও পুরনো পরীক্ষিত-কর্মীদের।

এ ছাড়া এমপিদের স্বজনদের কেউ কেউ এতো বেশি বাড়াবাড়ি করেছেন যা ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিছু এমপির বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা, কাবিটার পুরো অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ‘এমপি লীগ’ গঠন করেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকের বিরুদ্ধে নিজস্ব বলয় ভারী করতে দলের মধ্যে গ্রুপিং, কোন্দল-উপকোন্দল সৃষ্টি করার অভিযোগ রয়েছে। অনেকে টাকার বিনিময়ে দলের ত্যাগী, জনপ্রিয় ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড, বিএনপি-জামায়াতের লোকদের মনোনয়ন দিয়েছেন -তারা কিছুতেই মনোনয়ন পাবেন না।

এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। প্রার্থীর নানা দিক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দলের অনেক নেতাই আছেন, যাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, অনেককে জেলে যেতে হয়েছে। তাদেরও কিছু পাওনা আছে। যারা পদে আছেন, তারা তো কিছু একটা পেয়েছেন। যারা পাননি তাদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। যারা বিভিন্ন পদে আছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দল এ ঝুঁকি নেবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। প্রত্যেক আসন ধরে জরিপ রিপোর্টগুলো দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিচ্ছে। বিরোধীপক্ষের সঙ্গে যেন লড়াই করে জিতে আসতে পারেন -এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি (শেখ হাসিনা)। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টও দেখা হচ্ছে। নানাভাবে যাচাই-বাছাই চলছে।

এফএইচএস/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।