‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবে ২৩ দলীয় জোট’
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি দাবি করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩দলীয় জোট বলছে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা নির্বাচনে যাবে কি না সে নিয়ে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত পরশু (বুধবার) নির্বাচন কমিশন আইজিপিকে দেয়া এক নির্দেশনায়- মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় কোনো মিছিল যাতে না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলার পর গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এতে নারী কর্মীসহ বিএনপির ৬০/৭০ জন মারাত্মকভাবে আহত হন। এদের অনেকে টিয়ারগ্যাস ও গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।’
অলি আহমদ বলেন, ‘পুলিশ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে যাওয়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বগুড়ার সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, দলের গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু এবং খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানসহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে।’
তিনি বলেন, ‘গতকালের এই ঘটনায় পুলিশি তাণ্ডবে যখন কার্যলয়ের সম্মুখ ভাগ জনশূন্য তখন হেলমেটধারী একদল যুবক এসে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এই হেলমেট বাহিনীই নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনকারী কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং কর্তব্যরত সাংবাদিকদের মারপিট করেছিল। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার যে ছবি পাওয়া গেছে সেই ছবির যুবকটি ছাত্রলীগ কর্মী বলে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন।’
বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন জাতির সামনে উত্থাপন করতে চাই। মাত্র কদিন আগে ক্ষমতাসীন দল কয়েকদিন ধরে চার হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্র করেছে, জমা নিয়েছে। মিছিল করে প্রার্থীরা এসেছে। কেউ কেউ হাতি নিয়ে এসেছে এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে এসেছে অনেকেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তখন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। প্রশাসন, পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি। কাউকে আহত কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। তাহলে বিএনপির বেলায় নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের অবস্থান ও আচরণ ভিন্নতর হলো কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতেই আওয়ামী লীগের দুই মনোনয়ন প্রত্যার্শীর সমর্থকদের দ্বন্দ্বে দুইজন নিহত হয়েছেন, কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঘটনা না ঘটা সত্বেও তাদেরকে পুলিশের টিয়ারগ্যাস, গুলি ও রাইফেলের বাটের আঘাতে আহত হতে হলো কেন? গ্রেফতার করা হলো কোন যুক্তিতে?’
এলডিপি সভাপতি বলেন, ‘সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে। এই কি তার নমুনা? ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে কয়েক মাস ধরে সরকারি ব্যয়ে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২৩ দলীয় জোট নেত্রী, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিলেও সরকারি প্রভাবে নিম্ন আদালত তাকে জামিন না দেয়ায় তিনি মুক্ত হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।’
তিনি বলেন, ‘রাজতন্ত্র কিংবা স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ কিংবা প্রচার করা যাবে না এমন দৃষ্টান্ত আমাদের জানা নেই। অথচ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা-বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে পারছেন না।’
২৩ দলীয় জোটের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে ছিলেন যে, নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর কোনো রাজনৈতিক মামলা দেয়া যাবে না, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হবে না এবং গায়েবি ও মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি একথা বলার পরেও শত শত রাজনৈতিক ও গায়েবি মামলা হয়েছে এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে ঘর-বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি, কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়া পায়নি।’
অলি আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা থাকার পরেও এখনও সরকার মনোনীত প্রতিনিধিরা বহাল তবিয়তে আছে। নির্বাচন কমিশন তাদেরকে অবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে দেবার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসব অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে শুধু অন্তরায় নয়, প্রচণ্ড বাধা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব এবং সেক্ষেত্রে ২৩ দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সে বিষয়ে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জোট সমন্বয়কারী বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, জামায়াত নেতা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমবিআর/আরআইপি