ছেলে নৌকা বাবা ধানের শীষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

বাবা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ দেশের অন্যতম সেরা অটোমোবাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠান বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আর ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু বাপ-বেটার সে পরিচয় ছাপিয়ে রাজনীতির মাঠে তারা এখন পরস্পরের প্রতিপক্ষ।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ এবার চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন। বিপরীতে একই আসনে নৌকার মাঝি হতে চাইছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও তরুণ ব্যবসায়ী ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন জাগো নিউজকে জানান, গতকাল চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথমদিনেই চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

বাব-বেটার একই আসনে প্রধান দুই দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করায় ভোটের মাঠে জন্ম নিয়েছে কৌতুহল। এবার নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পেলেই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভোটের মাঠে মুখোমুখি হবেন বাবা মনিরুল ইসলাম ও ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

এ নিয়ে মনিরুল ইসলাম ইউসুফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘লড়াইটা বাবা-ছেলের নয়। এটা রাজনৈতিক আদর্শের। পরিবারের বাইরে আমরা যার যার আদর্শ লালন করি। দেশে এর আগেও এমনটা ঘটেছে। এলিট তার নিজের নির্বাচন করবে। আমি আমার নির্বাচন করব। আমি আশাবাদী দল থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মূল্যায়ন করা হবে।’

নিয়াজ মোর্শেদ এলিট জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অনুরোধে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। এখানে বাপ-ছেলে বলে কিছু নেই। বর্তমানে তরুণ নেতৃত্ব দেশের উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মিরসরাইয়ের জনগণও চায় পরিবর্তন হোক; নতুন নেতৃত্ব আসুক। আমি আশাবাদী দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি বিজয়ী হয়ে নেত্রীকে মিরসরাই আসন উপহার দিতে পারব।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-১ সংসদীয় আসন হলো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২৭৮ নম্বর আসন। মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে এটি গঠিত। মিরসরাইয়ে বর্তমানে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬ ভোটার রয়েছেন। এখানেই নির্মিত হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম শিল্প পার্ক মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৮ কিলোমিটার অংশ পড়েছে মিরসরাইয়ে। এসব কারণে আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। হেভিওয়েট প্রার্থী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

অপরদিকে, বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ইউছুপ ছাড়াও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমীন ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিগত নির্বাচনের ফলাফল

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে হারিয়ে এ আসনে এমপি হন বিএনপির প্রার্থী এম এ জিন্নাহ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধের কারণে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। পরে অবশ্য উপ-নির্বাচনে বিএনপিপ্রার্থী এম এ জিন্নাহকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির এম এ জিন্নাহ পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে তিনি বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দিলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হন প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী। ওই নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১ লাখ পাঁচ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ধানের শীষের প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি পেয়েছিলেন ৯৪ হাজার ৬৬৫ ভোট। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এমপি নির্বাচিত হন।

এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।