হেভিওয়েট প্রার্থীর শোডাউনে সকাল-বিকাল স্থবির মিরপুর রোড

বিকেল পৌনে ৪টা। নীলক্ষেত মোড়ে শত শত যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাফিক ইন্সপেক্টরসহ কয়েকজন কনস্টেবলকে চুপচাপ রাস্তার একপাশে দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। রাস্তার মাঝখানে ওয়ারলেস হাতে দাঁড়িয়ে এক যুবক কথা বলছেন। যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘কস কি! ভাইয়ের গাড়ি অহনও এতিমখানার সামনে, আমরা তো নীলক্ষেতের সামনে গাড়ি দাঁড় করাইয়া রাখছি।’

কথা শেষ করে ওই যুবক নিউমার্কেট থেকে নীলক্ষেতগামী কিছু গাড়িকে ইশারা দেন। ওইদিকে আজিমপুর মোড় থেকে গোটা দশ-পনেরটি বাসকে দ্রুতবেগে মিরপুর রোডের দিকে ছুটে আসতে দেখা যায়। ওই যুবক তখন বাসগুলোকে রাস্তার পাশে দাঁড় করায়।

রোববার বিকেলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরান ঢাকার লালবাগ-সূত্রাপুর-কামরাঙ্গীরচরের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের মনোনয়ন জমা দিতে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার সময় শত শত মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মিনিট্রাকসহ বিশাল শোডাউনে লালবাগ, পলাশী, আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা ও ধানমন্ডি এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। শত শত যানবাহন রাজপথে আটকা পড়ে।

সকালে একই সংসদীয় এলাকার আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় নির্বাচনী শোডাউনের কারণে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

পুরাণ ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এ আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। গতবার আওয়ামী লীগ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিলেও তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণকারী হাজি মো. সেলিমের কাছে পরাজিত হন।

এবার আওয়ামী লীগ কাকে নির্বাচন দেবে-তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জানা গেলেও এই দুই প্রভাবশালী নেতার ওপেন সিক্রেট দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচনে জয় লাভ করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছে এলাকাবাসী।

তারা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কিন্তু এবার বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে বিএনপি অর্থাৎ বিরোধীপ্রার্থীর চেয়ে নিজ দলের প্রার্থীই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এখানে যেই নমিনেশন পাননা কেন, তিনি নিজদলের প্রতিপক্ষের সমর্থন পাবেন না।

শুধু লালবাগেই নয়, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে তাদের দলের প্রার্থীরা।

শনিবার (১০ নভেম্বর) মোহাম্মদপুর এলাকার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক খানের মনোনয়ন জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ঢাকার আসনগুলোতে জয়লাভ করা কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন নগরবাসীরা।

এমইউ/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।