গঠনতন্ত্র নিয়ে আদালতের রায় অগ্রহণযোগ্য : ফখরুল
দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি। হাইকোর্টের অন্তবর্তীকালীন আদেশের পর বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অবস্থানের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি যে, একটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে একটা রিট পিটিশনের বিষয়ে কোর্টের আদেশ একেবারেই নজিরবিহীন। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনৈতিক দল নিজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, সেই গঠনতন্ত্রটা যেটা থাকে সেটাই চূড়ান্ত। সেক্ষেত্রে এই ধরনের রুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য আইনজীবীরা বলেছেন এটা গ্রহনযোগ্যই না।
‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান- এ বিষয়ে কোনো রকমের সন্দেহ নেই। এটাই মূল কথা।
দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা না করে সম্পূর্ণভাবে আদালতকে ব্যবহার করে তারা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। আপনারা দেখবেন সংবিধানে যতগুলো সংশোধনী এনেছে ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনী- এসব কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আনেনি, আদালতের একটা রায় নিয়ে সংশোধন করেছে। সংসদ কিংবা কোনো রেফারেন্ডামেও জনগণ ওইসবের সিদ্ধান্ত দেয়নি।
‘সবকিছু আদালতের আশ্রয় নিয়ে তারা করেছে এবং আদালতকে দিয়ে বলে যে, ওইসব গণতন্ত্রবিরোধী কাজ হয়েছে। গ্রামে কিছু দুষ্ট মোড়ল থাকে তারা প্রতিপক্ষকে কাবু করার জন্যে মিথ্যা ও সাজানো মামলা করে। ক্ষমতাসীনরাও সেটা করছে। এখন একটা পার্টির প্রধান কে হবেন, কে হবেন না, সদস্য কে হবেন, হবেন না সেটা পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। এ জন্য আমরা মনে করছি যে, এই রিট পিটিশন এবং এটা বিএনপির বিরুদ্ধের একটা সামগ্রিক চক্রান্ত যেটা চলছে এটা তারই একটা অংশ।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার যে একটা চক্রান্তে সেই চক্রান্তের ফলশ্রুতিতে দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে, সেই চক্রান্তের কারণে তারেক রহমানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দেয়া হচ্ছে সেই চক্রান্তেই।
‘উদ্দেশ্য একটাই বিএনপিকে ধ্বংস করে দেয়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচারবিভাগকে তারা হাতিয়ার হিসেবে এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। আমরা পুরো প্রচেষ্টা নিন্দা জানাচ্ছি। বিএনপি হচ্ছে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। দীর্ঘ ৪০ বছর বিএনপি বহুবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের রায় নিয়ে। বিএনপিকে সহজেই ধ্বংস করা যাবে না, নির্মূল করা যাবে না।
অতীতেও বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টাও সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই আদেশ অকার্য্কর। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের মহাসচিবকে বাদী করা হয়েছে অথচ মহাসচিবকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে আমরা বুঝব।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে আনা ৭ ধারার সংশোধনী নিয়ে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আবেদনের নিশ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে।
হাইকোর্টের এক আদেশের ফলে দুর্নীতিতে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখার পথ কার্যত আটকে গেছে। নয় মাস আগে আনা ওই বিএনপির এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে আওয়ামী লীগের আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রুলে বলা হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দলীয় কমিটিতে না রাখার যে বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রের ছিল, সংশোধনীতে তা বাদ দেয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের ৬৬(২)ঘ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গুলশানে এই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ ছিলেন।
এর আগে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে গণভবনে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সংলাপের যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করা হয়।
কেএইচ/বিএ