সংলাপ ভালো কিছু বয়ে আনবে : ড. কামাল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
ফাইল ছবি

জনগণের ঐক্যের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংলাপে আমি বিশ্বাস করি। আশা করি, সংলাপ ভালো কিছু বয়ে আনবে। আসুন আমরা সংলাপের মধ্যে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ঐক্যবদ্ধ জনতার জয় হবেই। এই সংলাপের সফলতা ঐক্যবদ্ধভাবে ধরে রাখতে হবে। যাতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে সংলাপের সফলতা জিম্মি না হতে পারে।’

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের শরীক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে গণভবনে সংলাপ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময় মনে করি জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করবে দেশের স্বার্থ নিয়ে, দলীয় স্বার্থে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক। জাতীয় লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে, সংবিধানের মূল্যবোধকে সামনে রেখে সেই আলাপ অবশ্যই হোক- এটা আমরা সবসময় সমর্থন করেছি, আগামীকাল বৃহস্পতিবার যেটা হবে সেটাও আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি। আসুন এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ সংলাপের মধ্য দিয়ে ঐক্যমতে এসে দেশকে আমরা এগিয়ে যাব। ঐক্যবদ্ধ জনতার জয় হবেই হবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যমত হয়ে গেছে। সেটাকে সুসংহত করে শক্তিতে পরিণত করে যেভাবে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, যেভাবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় যে সেই ফসল ধরে রাখতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘এবার অনুরোধ করব, আবেদন করব সবাই সংগঠিত হোন, ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে গ্রামে। এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের যে ফসল, সেটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সেটা যেন কেউ এবার আত্মসাৎ করতে না পারে। আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।’

সংলাপের ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কী আমাদের সংলাপের জন্য ডেকেছেন? নাকি আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ধাপ্পা দেবেন, আলোচনার নামে তিনি লোক দেখানো সংলাপের আয়োজন করেছেন কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। সেজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৭ দফা দাবি পেশ করেছি। আগামীকাল আলোচনা হবে এই দাবির ভিত্তিতে। ঐক্যফ্রন্ট চায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এদেশে যেন না হয়। সংবিধান সংশোধন করে হলেও আমরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই।’

খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘এই তিনদিনে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় ৭ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। আরেকটি মামলার আপিলে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। আজকে আরেকটি রায়ে বলা হয়েছে যে, বিএনপি যে তার গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল, সেই সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকার সংলাপের কথা বলছে, আবার আমাদের নেতকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এর মাধ্যমে আমাদের ৭ দফার মধ্যে একটি দাবিতে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে এই সরকার ওরা এটা কেয়ার করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল থেকে আজকে পর্যন্ত যত আলোচনা চলছে বিভিন্ন টেলিভিশনে, বিভিন্ন কাগজে সব জায়গায় তারা (সরকার) বলছেন সংবিধান সম্মত আলোচনার জন্য তারা আমাদের ডেকেছেন। আমরা সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, অবশ্যই আন্তরিকভাবে এই সংলাপের মাধ্যমে আমরা একটা পরিসমাপ্তি ও নিষ্পত্তি আমরা চাই। যদি আগেই কেউ দেয়াল তুলে দেন তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন যে কথা বলা যাবে না তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি সংবিধানের নামে বেড়াজাল সৃষ্টি করা হয় সংলাপ সফল হবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যমতের সরকার করতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্যই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। এজন্য দেশের মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব, ৭ দফা দাবি মেনে নিন। আমরা প্রত্যাশা করি সংলাপের মাধ্যমে এর সমাপ্তি আসবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশে যদি শান্তি চান, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করতে চান তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে আলোচনা করুন। সংলাপকে সফল করতে হবে, জনগণকে ভোট দেবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

‘জনগণের জন্যে সংবিধান, সংবিধানের জন্যে জনগণ নয়’ উল্লেখ করে জেএসডি প্রধান বলেন, ‘একটি দেশের সরকার প্রধান চাইলে পারে না এমন কিছুই নেই।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে, ‘বাংলাদেশকেও অস্বীকার করা হবে। তবে আমরা মনে করি- স্বাধীনতার পর ৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংশ করা হয়েছিল জাতীয় সরকারের বদলে দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই জাতিকে এর খেসারত দিতে হয়েছে। ৪৬ বছর যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা সংবিধানের চার মূলনীতি ভুলে গিয়েছে। ক্ষমতায় এলে আর কারও হুঁশ থাকে না। এজন্য ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্টা করতে হবে। সেটি কেবল সংখ্যা দিয়ে হবে না।’

বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি। আজ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে আমরা এ ঐক্য গঠন করেছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহ-সভাপতি এম এ গোফরান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জেএসডির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সামাজিক শক্তি, গণ-সাংস্কৃতিক দল, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল, ভূমিবল সমাজবাদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় বিপ্লবী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজলুর পার্টি, সোস্যালিস্ট পার্টি, সততা পার্টি, শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী সিপিবিএম) মোট ১৯টি দল এবং সংগঠনের নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

কেএইচ/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।