গ্রেনেড হামলা মামলার পুনঃতদন্ত দাবি রিজভীর
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী কাহার আকন্দকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পুনঃতদন্ত করে পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরুর জোর দাবি জানাচ্ছি।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সত্য ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করা আর মিথ্যাকে সত্য বলা আওয়ামী লীগের আদর্শিক চেতনা। জনগণকে তারা এতটাই অপাংক্তেয় মনে করে যে, তাদের ধোকাবাজি জনগণ টের পাবে না।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র ছিল না। অবারিত ছিল গণতন্ত্র। ফলে রাজধানীতে জনসভার জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণের পর নিয়ম ছিল মাইক ব্যবহারের অনুমতি নিতে হতো পুলিশের কাছ থেকে। মূল চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবির জবানবন্দী প্রদানকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সমাবেশে পুলিশের অনুমতি না দেয়ার কথা বলেন। অথচ সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রদান না করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২২ নভেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন বছর সময়কালে কখনোই কোনো সভা সমিতি সাক্ষাৎকার কিংবা আলোচনা সভায় কোথাও উল্লেখ করেননি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘২০ আগস্ট ২০০৪ তারিখে সমাবেশ অনুষ্ঠানের আগের দিন বিকেলে শেখ হাসিনা রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদ স্কুল মাঠে জনসভায় দীর্ঘ বক্তব্য দেন। সেখানেও তিনি অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এমন কি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে তিনি প্রায় ২০-২২ মিনিট বক্তব্য দেন। সেখানেও তিনি একটিবারের জন্য বলেননি পুলিশি অনুমতি না পাওয়ার কারণে মুক্তাঙ্গনে সভা না করে এখানে করতে হচ্ছে।’
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘২১ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী সন্ধ্যায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারেও তিনি এমন অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো শব্দই উচ্চারণ করেননি। বরং গত ২০১২ সালের ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে টিভিতে প্রচারিত এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট রাতে পুলিশ ওই দিনের মিটিংয়ের অনুমতি দিয়েছিল।’
রিজভী বলেন, ‘কিন্তু প্রশ্নাতীতভাবে সত্য যে, পুলিশ ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট তাদের অনুমতি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে প্রকৃত ঘটনা মিলছে না।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ৩ দিন ধরে প্রচার প্রচারণা চালালো, আর ২১ আগস্ট সমাবেশের দিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে কেন দলীয় অফিসের সামনে গেল? এতে কারো বুঝতে বাকি থাকে না যে, এর মধ্যে কোনো দূরভিসন্ধি কাজ করেছে। পুলিশ যখন দেখলো তাদের না জানিয়ে সমাবেশ করছে তখন মতিঝিল থানার ওসি নিয়মমাফিক একটি জিডি করে। অল্প সময় হাতে পেলেও পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ সেখানে যায়। মামলার বিচারিক কার্যক্রমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি, অথচ ফরমায়েশি রায় চাপিয়ে দেয়া হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রমুখ।
কেএইচ/এনডিএস/এমএস