মদিনায় স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ (পর্ব-৩)
বাংলাদেশ থেকে হাজিদের হজ মিশন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা র মধ্যে শুরু হবে। এ মিশনে আল্লাহর বান্দাগণ সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে হজের কার্যাবলী সম্পন্ন করবেন ধারাবাহিকভাবে। অবলোকন করবেন আল্লাহর প্রেমের নির্দশন। হজের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ জিয়ারত করবেন। অংশীদার হবেন অগণিত অসংখ্য ছাওয়াবের। প্রিয় থেকে প্রিয়তম হবেন আল্লাহর। বাইতুল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে হজিরা দিবেন তারই গুণগান এবং প্রশংসায়। পাশাপাশি আল্লাহর প্রিয় হাবিব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতে হাজিরা যাবেন মদিনায়। যদিও মদিনায় যাওয়া হজের বিধান নয়। কিন্তু সন্মানিত আশেকে রাসূলগণ হৃদয়ের আকুতি ছালাত ও ছালাম পৌঁছানোর জন্য স্বশরীরে হাজির হবেন মদিনায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারকে। যেখানে আছেন উম্মতের কাণ্ডারি নবী, বিশ্ব নবী, শ্রেষ্ঠ নবী, দু`জাহানের বাদশাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেই মদিনায় ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোও জগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- ইতিপূর্বে হজের স্মৃতি বিজড়িত স্থানের দুই পর্ব তুলে ধরা
হয়েছে...
মদিনায় জিয়ারতের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ-
১. মিকাত মসিজদ
মদিনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কা মুকাররামা যাওয়ার পথে মসজিদে নববী থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আকিক উপত্যকার পশ্চিম পাশেই এ মসজিদটি অবস্থিত। এটি মদিনাবাসীর মিকাত বলে এ মসজিদটি মসজিদে মিকাত নামে পরিচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ বা উমরাহ পালনের উদ্দেশে মক্কা যাওয়ার সময় এই জায়গায় একটি গাছের নিচে নামতেন এবং সেখানে সালাত আদায় করে উমরাহ অথবা হজের ইহরাম বাঁধতেন। এ কারণেই মসজিদটিকে শাজারাহ্ বলা হয়।
২. মসজিদে জুমআ
হিজরতের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রানুনা উপত্যকায় একশত সাহাবাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম জুমআর নামাজ আদায় করেন। পরবর্তিতে এ স্থানে মসজিদ নির্মাণ হয়। আজকের পৃথিবীতে যা মসজিদে জুমুআ নামে পরিচিত।
৩. মসজিদে কুবা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে সর্ব প্রথম কুবা নামক স্থানে নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে এ স্থানে মসজিদ গড়ে ওঠে। এ মসজিদটি মসজিদে কুবা হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে।
৪. মসজিদে গামামাহ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম ঈদের নামাজ গামামাহ মসজিদের স্থানে আদায় করেন। এ স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছেন বলে একে মসজিদে গামামাহ বলা হয়। এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। এ মসজিদকে মসজিদে মুসাল্লাহও বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ জীবনের ঈদের নামাজগুলোও মসজিদে গামামাহর স্থানে আদায় করেন।
৫. মসজিদে আবু বকর
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা থাকাকালে এ মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ান। তাই এটি মসজিদে আবু বকর নামে পরিচিতি লাভ করে। যা মসজিদে গামামাহর উত্তরে অবস্থিত।
৬. মসজিদে নববী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী নির্মাণের পর এখানেই ছিল আবাস। মাদানি জীবনের শুরু থেকে অদ্যবদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মসজিদে নববীতেই রয়েছেন। মসজিদে নববীর মধ্যে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যা বিশেষ বিশেষ কারণে মর্যাদা লাভ করেছে-
ক. রিয়াজুল জান্নাহ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুজরা মোবারক ও মিম্বারের মাঝখানের জায়গাটি ‘রিয়াজুল জান্নাহ’ বা ‘বেহেশতের বাগান’ নামে পরিচিত। এ স্থানটির রয়েছেবিশেষ ফজিলত। এখানে নামাজ পড়ারও বিশেষ ফজিলত আছে। মসজিদে নববীর ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুটি বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তৈরি মসজিদে খেজুর গাছের খুঁটিগুলোর স্থানে উসমানী সুলতান আব্দুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন।
খ. সুবাস স্তম্ভ :
মসজিদে নববীর মিম্বারের ডান পাশে খেজুর গাছের গুঁড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভটি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার স্থানান্তরের সময় এ গুঁড়িটি উঁচু স্বরে কেঁদেছিলেন।
গ. ই`তিকাফের স্থান :
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। এ স্তম্ভটি হুজরা শরিফের পশ্চিম পাশে জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।
ঘ. সাক্ষাতের স্থান:
মদিনায় বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। এখানে বসেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং এখানে বসেই কথা বলতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।
ঙ. আয়েশা স্তম্ভ :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত। স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কিরাম চেষ্টা করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর ভাগ্নে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ যা রিয়াজুল জান্নাহর ভেতর।
চ. তওবার স্তম্ভ :
হজরত আবু লুবাবা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি ভুল সংঘটিত হওয়ার পর তিনি নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বাঁধন না খুলে দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এ খুটির সঙ্গে বাঁধা থাকব।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে আল্লাহ আদেশ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খুলব না।’ এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন পর হজরত আবু লুবাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুর তওবা কবুল হলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এটিও রিয়াজুল জান্নাতের ভেতর অবস্থিত।
ছ. জিবরাইলের অহি নিয়ে আসার স্থান :
ফেরেশতা হজরত জিব্রিল আলাইহিস সালাম যখনই হজরত দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু আনহুর আকৃতি ধারণ করে ওহি নিয়ে আসতেন, এবং এ স্থানে অধিকাংশ সময় তাঁকে উপবিষ্ট দেখা যেত।
ঝ. মিহরাবে নববী : |
মসজিদের নববীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান মিহরাবে নববী। মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে এখানে নফল নামাজ পডুন। মিহরাবের ডানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাঁড়ানোর জায়গা।
উল্লেখিত স্থানগুলোর মর্যাদা অনেক বেশি। এ স্থানগুলো ইসলামের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। এ স্থানগুলো পরিদর্শনে ঈমান অনেকগুণ বেড়ে যায়। দিল বা অন্তর হয়ে তাজা, সতেজ ও সজিব। বান্দা আল্লাহর আনুগত্যে এগিয়ে আসে এ স্থানগুলোর পরিদর্শনে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় কুরআন হাদিস মোতাবেক জীবন পরিচালয়নায়। আল্লাহ আমাদেরকেও এই স্থানগুলোর জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। যার হজে যাচ্ছেন তাঁরা যেন সুন্দর ও সুস্থ্যভাবে এ স্থানগুলো জিয়ারত করে আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক হতে পারে। আল্লাহ যেন সবাইকে ইসলামের জন্য কবুল করেন। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে তাওফিক দান করেন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। হজের স্থানগুলোর পরিচিতি ও তাৎপর্যসহ ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
# মক্কায় হজের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ (পর্ব-১)
# মক্কায় হজের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ (পর্ব-২)
এমএমএস/এমএস/আরআইপি