‘টকশোতে দুই দিকের দুইজন, কেউ জানে না’
বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে ‘পুলিশের অনুমতি’ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতার ‘অজ্ঞতা’ তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘(টকশোতে) দুই দিকের দুইজন, কেউ জানে না’।
রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলছে (সমাবেশের) অনুমতি দেয়া হয় না। অনুমতি দেয়া হয়েছে, করুক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তমঞ্চ করে দেব, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে মাইকও সেট করে দেব। যার যা বলার বলতে থাকুন, কোনো অসুবিধা নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলেও পুলিশের অনুমতি ছাড়া কি আমরা সভা করেছি? এখন তো অনুমতি আগের দিন দুপুরে দেয়া হয়। আগে অনুমতি দেয়া হত রাত ১১টার পর। পার্টি অফিসের সামনে আমরা অনুমতি পাইনি। পুলিশের অনুমতির বিষয়টি চলে আসছে। আমরাও অনুমতি নিই, বিএনপির নিতে অসুবিধা কি?’
বেসরকারি টেলিভিশনের নাম উল্লেখ না করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টকশো হচ্ছে পুলিশের অনুমতি নিয়ে। বিএনপির যিনি গেছেন তিনি বলছেন, রাজনৈতিক মিটিংয়ে পুলিশের অনুমতি... জানেই না কিছু। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বিরোধী দলের অনুমতির জন্য কী অবস্থা ছিল, সেটা ভুলে গেছেন। আমাদের যিনি গেছেন তিনি বলছেন, বিএনপি বিশৃঙ্খলা করে সেজন্য...জানে না কিছু। তাকে (টকশোতে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগে নেতা) কাল ধরলাম, তুমি যে ওখানে গেলা ডুবাইতে গেছো। এই হচ্ছে অবস্থা। দুই দিকের দুইজন কেউ জানে না। যারা সাবজেক্ট ঠিক করছে তারাও জানে না।’এ সময় ষেকানে উপস্থিত সবাই হেসে ওঠেন।
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ৫ দফা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা যারাই দাবি করুন সেই দাবির আলোকে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় সেটা সংবিধান সম্মত হবে না। এ সময়ে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগও নেই। নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়াটাই হচ্ছে তাদের প্রয়োজন। তাই তাদের দাবি একেবারেই অযৌক্তিক।’
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রশাসন সেভাবে সহযোগিতা করছে না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রশাসনিকভাবে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা গাফিলতি প্রকাশ্যে নেই। সচিবালয় সারাদেশের মতোই শান্ত, কোনো অস্থিরতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অস্থির অশান্ত পরিবেশে আপনি দাবি করতে পারেন, এখানে নির্বাচনকালীন একটা শক্তিশালী সরকার করা হোক। সেই বাস্তবতা তো এখানে নেই। বাংলাদেশ তো এখন অশান্ত নয়। বিএনপিসহ তাদের সহযোগিরা অশান্তির উস্কানি দিচ্ছে। দেশ তো অশান্ত নয়। তাহলে শান্তির মধ্যে তারা অশান্ত জরুরি সরকার কেন চাচ্ছে? এখানে এমন কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য তাদের বিশেষ সরকার দরকার?’
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘অনেকে উত্তেজনার কথা বলছেন, আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেইনি। আমরা নিরীহ গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়েছি। তাহলে কেন উত্তেজনার কথা আসবে?’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলন বা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন কিনা- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে মওদুদ সাহেব বলেছেন না, উনি ভেবেছেন বিশাল একটা সাগরের উত্তাল উর্মিমালা চলে আসবে রাজপথে তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য। সেই পরিবর্তন এক মাসে হবে না। দেখবেন, সিডিউল যখন ঘোষণা হবে কতজন এসে নির্বাচনে অংশ নেয়।’
তিনি বলেন, ‘এই ঐক্য, এই প্রক্রিয়া, এই যুক্তফ্রন্ট- আমার তো বিশ্বাস তারা সবাই নির্বাচনে আসবে। যে যেটাই বলুন, আমি কাউকে আক্রমণ করছি না। সে পথটা খোলা আছে। যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া কি ইলেকশনে আসবে না মনে করেন, বিএনপি না এলে তারা আসবে না? সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। খোঁজ-খবর আমাদেরও আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাবিনামা তো আসবেই। বিরোধী দল যা আদায় করা যায় সেটা নিয়ে দাবি করবেই। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো অসহিষ্ণুতা নেই। আমরা সরকারের আছি, আমাদের সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। ইলেকশনের ছবি, এখন যে আন্দোলনের ছবি সেটা থাকবে না। ওই ছবিটা অংশগ্রহণের, উৎসব মুখর পরিবেশের যে দৃশ্যপট সেটাই দৃশ্যমান হবে।’
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইনে সবকিছু থাকে না, আইনের বিধি আছে, আবার প্রবিধি আছে। বিধিমালায় পরিষ্কার করা হয়, আইনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তথ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে কথা বলবেন, অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে বিধিমালা প্রণয়নের পর। সম্পাদক পরিষদের যদি এ ব্যাপারে যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব থাকে সেটা কেন গ্রহণ করা হবে না।’
আরএমএম/এমএমজেড/এমএস