‘নির্বাচনকালীন সরকারের এখতিয়ার একমাত্র শেখ হাসিনার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ছবি-ফাইল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানেন না। বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, সাইজ কী হবে, আকারে কতটা ছোট হবে, ক্যাবিনেটে কতজন থাকবেন?- তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ জানেন না। আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক, আমিও এখন পর্যন্ত জানি না।

জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হলে আওয়ামী লীগ যাবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হলে আমরা ডাক দেব। এখন আমরা জনগণের ঐক্য চাই।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের বিষয়। নির্বাচন মানেই হলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা- সেটা হবেই। আমরা এগুলোকে ওয়েলকাম করি। আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাচ্ছি এমন তো নয়। ঐক্যও হতে পারে। নির্বাচন আসলে জোট হবেই। আওয়ামী লীগও জোট করে, অন্যান্য দলও জোট করে। বিএনপিরও জোট আছে। আমাদের ১৪-দলীয় জোট আছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে, সরকারে আমরা এক সঙ্গে আছি। সেই মহাজোটের সরকারই তো বর্তমানে-বাস্তবে দেশ চালাচ্ছে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বড় দলের সমর্থক ও ভোটারদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল আছে। এ দলগুলোকে বাদ দিয়ে যেটা হবে তা হলো সাম্প্রদায়িক ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় নাকি? ‘জাতীয় ঐক্য’- এ শব্দদয় ব্যবহার না করাই ভালো।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি একমাত্র বিএনপির পক্ষে শোভা পায়। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনিয়ম, জালিয়াতি নেই। নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় গেছে বিএনপি।’

কাদের বলেন, ‘২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ- এটা নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব আমাদের না, এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ না। নির্বাচন কমিশনই বলবে কবে নির্বাচন হবে। এটা বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনো মন্ত্রীর নয় কিংবা দলের কোনো নেতার না। তাই আমরা যার যার এরিয়ার মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল (দায়িত্বশীল) ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো।’

রাজশাহী নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কোনো কারণ আছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতাটা অসুস্থতা ও  অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আমাদের ডাকতেই হবে। এখন সবার এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বিচ্যুতির কারণ ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘রেসপনসিবল লিডাররা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন তাহলে কর্মীরা কী শিখবে? নির্বাচন করার ইচ্ছা থাততেই পারে। শুধু একজনই মনোনয়ন চাইবেন, তা তো নয়, অন্যরাইও চাইতে পারেন। আমাদের পার্টির ফান্ডও আছে। ২৫ হাজার করে টাকা দিতে হবে। এবার ভাবছি আরেকটু বাড়াব।’

দলের মধ্যে আত্মঘাতী প্রচারণা বন্ধের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘চা দোকানে বসে গ্রুপ মিটিং করে দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করে- যেটা হওয়ার কথা ছিলো বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে। এর চেয়ে আত্মঘাতী প্রচারণা আর কিছু হতে পারে না। এ আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে।’

‘শূন্যতা না থাকলে নির্বাচন পর্যন্ত কোনো কমিটি আপনারা ভাঙতে পারবেন না। নতুন কোনো কমিটিও করা যাবে না’-এমন মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বরগুনাতে একটা ঘটনা ঘটেছে এবং আরেকটা ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরে। আমরা তা মোটেও অ্যালাউ করব না। কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় অফিসে অভিযোগ দেবেন। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমাধান করবেন। আমার সঙ্গে আলোচনা করবেন। যদি আলোচনা যথেষ্ঠ না হয়, তাহলে দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেব। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। যারা করছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে, আর ভবিষ্যতে যারা করবেন তাদের শাস্তি পেতে হবে।’

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে কেউ যদি মনে করেন এমপি হওয়ার পথ সুগম হবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জরিপ রিপোর্ট আছে, আমলনামা আছে, এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) আছে, ছয়মাস পরপর আপডেট হচ্ছে। সর্বশেষটাও যোগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম যাচাই-বাচাই করছে। আমাদের জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দিতে হবে। যিনি বেশি গ্রহণযোগ্য তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে যতই প্রভাবশালী নেতা হোন না কেন মনোনয়ন দেয়া হবে না। নির্বাচন আর দল এক কথা না। কর্মী যদি জনমতে প্রভাবশালী নেতার চেয়েও গ্রহণযোগ্য হয় দল তাকে মূল্যায়ন করবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু প্রমুখ।

এইউএ/এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।