সরকারের নির্দেশেই খালেদা জিয়া কারাগারে : রিজভী
জনগণ আওয়ামী লীগের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এমন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘বিএনপির গতকালের জনসভায় বিপুল মানুষের সমাগমেই প্রমাণিত হয়েছে জনগণ এ সরকারকে আর চায় না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বার বার বাধাগ্রস্ত করছে সরকার। তিনি একের পর এক মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও আবার তা নানা কায়দায় আটকে দিচ্ছে সরকার। সরকারের নির্দেশেই বেগম জিয়া কারাগারে আটকে আছে। বেগম জিয়া সুবিচারে নয় প্রতিহিংসামূলক সরকারি বিচারে কারাবন্দি। তার কারাবন্দিত্ব শুধুমাত্র সরকারের প্রতিহিংসার শিকারে।’
রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রাতে বিএনপির জনসভার বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আওয়ামী লীগ নয়, নির্ভর করছে আদালতের ওপর। আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে না সরকার। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি সরকারের যে পদত্যাগের দাবি করেছে, তা নাকচ করে দিয়ে কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা, সংবিধানতো পরিবর্তন করেছেন আপনারা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন বাতিলের মাধ্যমে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। সুতরাং গতকালের ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও সত্যের অপলাপ।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করা যায়- যেমনটি ক্ষমতাসীনরা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপনারা কিভাবে বাদ দিয়েছেন, আপনারা যেভাবে বাদ দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই আবার তা সংবিধানের সংযোজন করা সম্ভব। যতই ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ও অপলাপ করুন না কেন আপনাদের এবার বিদায় নিতেই হবে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোনো গড়িমসি চলবে না।’
রিজভী বলেন, ‘জনগনের ভোট জনগন দিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন জনগন হতে দেবে না। শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের শত্রু পক্ষ। তার অধীনে নির্বাচনের অর্থই হচ্ছে ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ। জালিয়াতির মেশিন ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নীলনকশা বন্ধ করুন। পৃথিবীর অন্যান্য স্বল্প সংখ্যক দেশে যারা ইভিএম চালু করেছিল তারাও এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছে। অথচ সকল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে কেন এ গণবিরোধী সরকার ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট করতে চায়, সেটি এখন জনগণ টের পেয়ে গেছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘গতকাল বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়িতে-বাড়িতে হানা ও কর্মসূচি স্থলে আসার পথে ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে। গতকাল ঢাকার বিশাল জনসমাবেশে আসার সময় পথে গাড়ি আটকে দিয়ে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহনকেও সমাবেশ স্থলে ঢুকতে দেয়া হয়নি।’
একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁর আত্রাইসহ বিভিন্নস্থানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছে এবং হামলা করেছে পুলিশ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। গতকাল রাজশাহী, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ এবং পিরোজপুর থেকে দলের অন্তত ৮০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
বিএনপির পক্ষ থেকে গ্রেফতার ও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এনএফ/এমএস