সংশোধিত আইনে নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না : বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৮

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার মন্ত্রীসভায় সড়ক পরিবহন আইনের যে সংশোধনী অনুমদন করেছে তা ইতোমধ্যেই পরিবহন মালিক সমিতি ছাড়া সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সংশোধিত এই আইনে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না। কারণ, এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর স্পষ্ট দিক নির্দেশনা কিংবা কঠোর শাস্তির বিধান নেই।’

শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবাই জানেন যে শুধু চালকের অপরাধে দুর্ঘটনা ঘটে না। চালক নিয়োগে, গাড়ির ফিটনেস যথাযথ করা এবং চালকদের বেতন, ভাতা, অবসর শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব যে মালিকদের- তাদের বিরুদ্ধে আইনে কার্যকর পদক্ষেপ তথা বিআরটিএ এর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনের কোনো বিধান রাখেনি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলা হবে কিনা এটা নির্ধারণের দায়িত্ব নিরপেক্ষ যোগ্য, সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আমরা এই আন্দোলন এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছেন তাদের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য, আন্দোলনকে গঠনমূলক সহযোগিতা করার জন্য, আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সরকারি চক্রান্তের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য এবং আন্দোলনের প্রকৃত সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের জন্য যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, আহতদের সুচিকিৎসা এবং মিথ্যা ও নিপীড়নমূলক সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংঠগন এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ ও পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত এই শিশু-কিশোরদের ৯ দফা দাবি ও আন্দোললের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমরাও বিএনপির পক্ষ থেকে এবং ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তাদের ন্যায্য ও জরুরি এসব দাবি-দাওয়ার প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন ঘোষণা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জনগণের জানমাল রক্ষায় ক্রমাগত ব্যর্থ ও অযোগ্য সরকার প্রথম দিন থেকেই এই আন্দোলনে ষড়যন্ত্র ও উসকানি আবিষ্কারের অপচেষ্টা চালাতে শুরু করে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে জনগণের সব ন্যায্য আন্দোলনেই এই সরকার একই কাজ করেছে এবং এই সুযোগে বিরোধীদলের ও মতের নেতা-কর্মী ও আন্দোলনে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের আক্রমণে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীরা গুম হয়েছে, আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় হয়রানি হয়েছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিও তাদের কটূক্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি দলের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় হেলমেট ও মুখোশ পরে অগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, কিরিচ, রামদা ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অমানবিক ও বর্বোরোচিত হামলা চালিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের মারপিট করেছে। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন হোস্টেলে ও আবাসস্থলে গিয়ে ছাত্রদের মারপিট করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। এসব কিছুই ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে এবং তাদের সহযোগিতায়।’

ফখরুল বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যে অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধ এবং সুশৃংখল প্রতিরোধের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছি। এটা অপরাধ হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যন্ত একই অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার কথা।’

যারা পুলিশের সামনে হেলমেট ও মুখোশ পড়ে সহিংসতা করেছে সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারী এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে তারা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আপনারা সমর্থন দিয়েছেন, এ থেকে বিএনপির গেইন কী এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির গেইন তো হচ্ছে, বিএনপি একটা যৌক্তিক আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে এবং এই আন্দোলনের প্রতি সারাদেশের মানুষের সমর্থন রয়েছে। আজকে যে পদ্ধতিতে সরকার এটাকে দমন করেছে এটা সার্বজনীনভাবে ধিকৃত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করে আওয়ামী লীগ আরও গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।