খসরু-মিলন-মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ‘উসকানিদাতা’ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন ও নাগরিক আন্দোলনের মাহমুদুর রহমান মান্নার গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এমন দাবি জানান।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্দোলনে হ্যাংলা-পাতলা মহিলা সিগারেট হাতে কোমলমতি শিক্ষার্থী; ২৫-৩০ বছরের যুবক, দাঁড়িওয়ালা, উনিও কোমলমতি শিক্ষার্থী! তো আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখতে পেলাম ৪৬ বছরে মহিলাও এখন শিক্ষার্থী সেজেছেন স্কুলড্রেস পরে। ২৫-৩০ বছরের শিবির ক্যাডারও কোমলমতি শিক্ষার্থী!’
‘দেখতে পেলাম, বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তারপর নাগরিক আন্দোলনের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলনের ফোনালাপ; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে তা বের হয়েছে, উস্কানি দিচ্ছে!’
‘বলছে, কুমিল্লা থেকে লাভ নেই ঢাকায় যাও। এর মধ্যে ঢাকায় আসার পর পয়সা না দেয়ার কারণে, তাদের ঢাকায় আসা-যাওয়ার ভাড়া না দেয়ার কারণে বচসা হয়েছে, সেগুলো আমাদের কানে এসেছে; এসব সময় মতো জানতে পারবেন।’
‘শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি অফিসে হামলা করেনি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থী) মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অর্থাৎ ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিক অফিসে হামলা হয়েছে। এ হামলা শিক্ষার্থীরা পরিচালনা করেনি।’
‘কারণ শিক্ষার্থীরা এ কাজ এতোদিন করেনি, শুরু থেকে তারা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করেনি। শুরু থেকে তারা অত্যন্ত শান্ত ছিল এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা সচেতন ও সচেষ্ট ছিল। পুলিশও তাদের সহায়তা করেছে; আমরা নিজেরাও সহায়তা করেছি। সুতরাং ওই হামলা শিক্ষার্থীরা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীর ড্রেস পরে ২৫, ৩০ এমনকী ৪০ বছরের যুবক-মহিলা কোমলমতি শিক্ষার্থী সেজেছেন, যাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে; তারা ওই হামলা পরিচালনা করেছেন।’
‘উসকানিদাতাদের খবর সংবাদপত্রে না আসা দুঃখজনক’- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কয়েকটি কাগজে এগুলো ছাপা হয়নি। দেখলাম মহিলারা, এমনভাবে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে ফেসবুক লাইভে আসলেন; উনি তো সেখানে ধাওয়া খেয়ে লাইভে এসেছেন; তাকে যখন গ্রেফতার করা হলো তখন উনি বললেন, উনি ‘শুনে’ এমনটি করেছেন। তবে কেন শুনে হাঁপালেন?’
“এরপর আবার বের হয়ে আসলেন- ‘পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে’- এমন কাজ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এমন আরও অনেককে দেখেছি, সরকার তাদের চিহ্নিত করেছে। তাদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদকে যে ফোন করেছিল তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’
‘আমি সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখি- এখনও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি। যারা উসকানি দিয়েছে; তাদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, ‘গতকাল দেখলাম শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ঘরে ফিরে যাচ্ছে; তখন এ আন্দোলনকে যারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল তারা ভেবেছিল তাদের খেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যখন ঘরে ফিরে গেল; তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ঢাকাসহ সারাদেশের ক্যাডারদের এনে; যুবকদের গায়ে শিক্ষার্থীর ড্রেস পরিয়ে সমাবেশ করলেন; সমাবেশের পর তারা আওয়ামী লীগের অফিসের দিকে মিছিল নিয়ে গেলেন।’
‘ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের অফিস তো দাবি আদায়ে জায়গা নয়; তারা কেন গেলেন? দাবি আদায়ের জন্য তো প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে যেতেন?’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে আসেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করেন। কিছু কিছু জায়গায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রাজধানীসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা। এতে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত।
কিন্তু এরপরও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত আছে। সোমবারও রাজধানীর রামপুরা ও আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। অন্যদিকে সচিবালয়ে এদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহাণির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এইউএ/এমএআর/আরআইপি