রেণু বলল ‘বসেই তো আছ, লেখো তোমার জীবনের কাহিনী’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, `আমার সহধর্মিনী একদিন জেলগেটে বলল, ‘বসেই তো আছ, লেখো তোমার জীবনের কাহিনী’।
ওই আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু আরো লিখেছেন, `আমার স্ত্রী যার ডাকনাম রেণু আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিলো। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম’।
বেগম ফজিলাতুন্নেসা (বেগম মুজিব) সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর লেখা আত্মজীবনীতে এমন সরল উক্তিই বলে দেয় জাতির পিতা হওয়ার পেছনে সহধর্মিনীর অবদানের কথা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এই মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার অপরিশীম অবদান রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আজ ৮৫তম জন্মবার্ষিকী।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ১৪ বছর কারাদণ্ডকালীন দলের কঠিন সংকটে হিমালয়ের মতো স্থির থেকে সমস্যার সমাধান দিয়েছেন বঙ্গমাতা। সংকটে বিচক্ষণ পরামর্শদাতা এবং সুখে-দুঃখে বঙ্গবন্ধু ও তার প্রাণপ্রিয় দল আওয়ামী লীগের সারথী হিসেবে বেগম মুজিবের অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।
বেগম মুজিব ছিলেন মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোনো পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। তার তেমন কোনো বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ ছিল না। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ও অতিথি পরায়ণ।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরাদি নেয়া ও পরিবার-পরিজনদের যে কোনো সংকটে পাশে দাঁড়াতেন। নিজের হাতের বালাও তুলে দিয়েছিলেন দলের কর্মীদের হাতে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় ঘাতকরা পরিবারের অপর সদস্যদের সঙ্গে বেগম মুজিবকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বঙ্গমাতা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পুত্রকন্যা, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে নিজে গৃহবন্দি অবস্থায় সংসার ও দলের হাল ধরেছেন। দুর্বিসহ কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। দেশের প্রতিষ্ঠাতা বা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও তিনি অতি সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা শেখ জহুরুল হক ও পাঁচ বছর বয়সে মাতা হোসনে আরা বেগমকে হারান তিনি। ১৯৩৮ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ হয়।
এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন- শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এবং শেখ রেহানা। পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। তিনজন পুত্রই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে মুজিব দম্পতির সঙ্গে আততায়ীর হাতে নিহত হন।
বেগম মুজিবের জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বনানী কবরস্থানে বেগম মুজিবের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ অজস্র সংগঠন জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
এএসএস/এআরএস/একে