রুখে দাঁড়াবার জন্য জাতীয় ঐক্য : ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা ছিলো সেই চেতনাকে যদি সত্যিকার অর্থে আমরা বাস্তবায়িত করতে চাই তাহলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এই যে দানবীয় শক্তি আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে- আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, মানবাধিকার ধ্বংস করছে, আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করছে, আমাদের অর্জনগুলোকে ধ্বংস করেছে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যত নষ্ট করছে, ধ্বংস করছে তাদেরকে রুখে দাঁড়াবার জন্য আজকে সত্যিকার অর্থে একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হওয়া দরকার এবং সেই সাথে আন্দোলনের মাধ্যমে, সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের আমাদের অর্জন করা দরকার আমাদের সেই লক্ষ্য সত্যিকারের জনগণের একটি সরকার। যা হতে পারে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে এবং সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লেক শোর হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ‘রাইট টু লাইফ এ ফার ক্রাই ইন বাংলাদেশ ২০০৯-জুন ২০১৮’ শীর্ষক রাউন্ড টেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন মহাসচিব।
গোল টেবিলের শুরুতেই ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, বিচারবহিরর্ভূত হত্যার তালিকা ও সংখ্যার আলোকে একটি ডকুমেন্টারি প্রর্দশন করা হয়। বেসরকারি সংস্থা অধিকার অধিকার ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য ব্যবহার করে এই ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘ডকুমেন্টরি প্রদর্শনের পর বলার কিছু থাকে না। প্রতিদিন আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে লাশ পরে থাকে। নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারাচ্ছে, শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর কত কি নির্যাতন করা হচ্ছে। ভিন্নমত পোষণকারীদের হাতুড়িপেটা করা হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৫০০ এর অধিক নেতাকর্মী হারিয়ে গেছে, ১০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সারাদেশে ৭৮ হাজার মামলায় ১৮ লক্ষ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে।’
সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই বিষয়গুলো অনেকবার বলেছি কিন্তু সরকারের কর্ণগোচর হয়নি। বরং সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া। তাই তারা সবিংধান, আইন কানুন উপেক্ষা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করছে চাইছে। ’
ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করছে সরকার। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে খালেদা জিয়ার জেল। যিনি তার জীবনের বড় অংশ গণতন্ত্রের জন্য উৎসর্গ কররছেন, তাকে একটি মিথ্যা মামলায় আটক করেছেন। সাতবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হলেও সরকার কর্ণপাত করেননি। এমনকি সর্বশেষ ১১ দিন ধরে খালেদা জিয়ার সাথে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি কারাগারে অসুস্থ।’
তিনি বলেন,‘ বিএনপিকে ছাড়া দেশে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। শুধু তাই নয়, বিগত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কি হয়েছে তা আপনারা সকলেই অবগত রয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।’
গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল মান্নান, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী ছাড়া ও গণস্বাস্থ্য ট্রাস্ট্রি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট এলিনা খান প্রমুখ অংশ নেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ জানান, আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র্র, জাতিসংঘ, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, ভারতসহ আরো বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।
কেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম