সাধারণ নির্বাচন নিয়ে মওদুদের নতুন ‘ইঙ্গিত’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ২৯ জুন ২০১৮

নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি এতদিন অনড় থাকলেও এবার নতুন ইঙ্গিত দিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন যদি খুলনা ও গাজীপুর স্টাইলে হয়, তাহলে দুটো জিনিস; এক হলো- দেশের মানুষের কাছে আমরা প্রমাণ করতে পারলাম দলীয় সরকারের অধীনে কোনোদিন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না আর দ্বিতীয়টি হলো- আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে যে, সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই আমরা নির্বাচন করব, নাকি করব না?’

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমাদের সেই পথ দেখিয়ে দেবে। আজ এ জিনিসটা স্পষ্ট করা দরকার। সেজন্য আমি চেষ্টা করলাম যতটুকু সম্ভব স্পষ্ট করার যে, ওই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ নির্বাচন হবে সাধারণ নির্বাচনের আগে।’

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন জিসাস সংস্কৃতিসেবীদের সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে।

মওদুদ বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না- এটা প্রমাণ করতে হবে, এটা আমরা কিন্তু প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা বলেছিলাম যে, গাজীপুর দেখার পর আমরা দেখব সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা কী করতে পারি?’

‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের অনেক পুরনো সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, আপনারা ওই তিন সিটি নির্বাচনে কেন অংশগ্রহণ করছেন? এর উত্তর একটাই। উত্তর হলো- আমরা বারবার প্রমাণ করতে চাই এবং এটা হবে শেষ পরীক্ষা এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য।’

‘দলীয় সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না সেটা আমরা জাতির কাছে প্রমাণিত করব। এটা প্রমাণ করার জন্য নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করছি’- যোগ করেন মওদুদ।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটা একটা তল্পিবাহক, আজ্ঞাবাহক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে সংবিধানে যে অধিকার দেয়া হয়েছে, যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে- সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার মতো শক্তি, ক্ষমতা বা সাহস এ নির্বাচন কমিশনের নেই। যার জন্য এ কমিশন রাখা না রাখা, থাকা না থাকা একই ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন কমিশন অবশ্যই পুনর্গঠন করতে হবে। এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভবপর নয়। সেটা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর মাত্র পাঁচ মাস আছে মাঝখানে। বাংলাদেশ এখন অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে আছে, ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ নির্ভর করছে। এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, স্বাধীনতার পর যেটি এখনও আমাদের জীবনে আসেনি সেই চ্যালেঞ্জ হলো- বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। কেননা সবকিছু, আমরা সবই হারিয়েছি। একটা জাতির জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলো থাকার কথা, যেগুলোর মাধ্যমে জাতির সত্যিকারের উন্নতি হয়, ওই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে নয়, রাস্তাঘাটের মাধ্যমে নয়। মূল্যবোধের মাধ্যমে, চর্চার মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে যে জাতি সত্যিকার অর্থে সাফল্য লাভ করে- এর সবকিছুই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তাই এসব কিছু আমাদের ফিরে পেতে হবে। এটাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আজ এ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নয়, এ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন সারা বাংলাদেশের মানুষ, সকল শ্রেণির মানুষ, সকল দলের মানুষ; একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া।’

মওদুদ বলেন, ‘এখন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে। আমি এটুকু বলতে পারি, অনেক চেষ্টা করেছে তারা এবং এখনও চেষ্টা করছে যেন তার মুক্তি বিলম্বিত হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করতে গিয়ে তারা নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করেছে যে, তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। এটাই তাদের নীতি। কিন্তু এটুকু আমি বলতে পারি, বিলম্বিত হলেও বেগম জিয়া আমাদের মাঝে খুব শিগগিরই ফিরে আসবেন। তার মুক্তি হবে। তার মুক্তির পথ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। জামিন তো একটা অধিকার। জামিন তো মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নয়। জামিন হলো একটা মৌলিক অধিকার। যে কোনো মানুষের জামিন পাওয়ার অধিকার আছে এবং আইনে সেটা দেয়া আছে।’

‘আশা করি খুব শিগগিরই আমরা তার জামিন নিশ্চিত করতে পারব এবং তিনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। যেদিন তিনি ফিরে আসবেন সেদিন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সূচিত হবে, গণতন্ত্রের নতুন জোয়ার তৈরি হবে। সেই জোয়ার বন্ধ করার ক্ষমতা এ সরকারের থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘শেষে বলতে চাই, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একটাই পথ, সেটা হলো রাজপথ। সেজন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ’

সংগঠনটির সভাপতি আবুল হাশেম রানার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট দীপেন দেয়াওয়ান, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, সুলতানা রহমান, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

কেএইচ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।