খুলনায় বিএনপির জন্য অঘোষিত কারফিউ : রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ১৪ মে ২০১৮

খুলনায় বিএনপির পোলিং এজেন্টদের ট্রেনিং দেয়ার সময় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, সেখানে (খুলনা) বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারদের জন্য অঘোষিতভাবে কারফিউ চলছে। আর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের জন্য চলছে ফাঁকা মাঠে উৎসব।

সোমবার বেলা পৌনে ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেছেন, আপনারা (সাংবাদিক) জানেন আগামীকাল (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণ-গ্রেফতারের পাশাপাশি খুলনা সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাণ্ডব চলছে। গতকাল পোলিং এজেন্টদের ট্রেনিং দেয়ার সময় ১০-১২জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শিল্প এলাকায় দা, রাম-দা নিয়ে বাড়ি বাড়ি হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গতকাল রাতে পুলিশ এক অসুস্থ কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়, যার সারা শরীরে টিউমার। কয়েকদিন আগে সে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। পরে তার ছেলে-মেয়েরা কান্নাকাটি করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি না করে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় খুলনাকে এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, খুলনায় যা হচ্ছে তা হলো- একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের কোন ভরসা নেই বলেই আমরা বারবার সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছিলাম কিন্তু সরকার এ বিষয়ে গ্রীক মূর্তির মতো নিশ্চল ও নিশ্চুপ থেকেছে -যা দুরভিসন্ধিমূলক। ইলেকশন কমিশনের যেন পল্লীগীতির সেই শ্লোকের মতো অবস্থা ‘বন্ধু, দেখিয়াও দেখলা না/বন্ধু, শুনিয়াও শুনলা না’। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় আছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা। তারা প্রতিনিয়ত ত্রস্ত ও ভীত।

এ সময় জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও গণমাধ্যমের কর্মীদের খুলনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারি দলের সিন্ডিকেটের কারণে রমজানের আগে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘রমজান শুরুর আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এখন আকাশছোঁয়া। কয়েকদিনের মধ্যেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করেছে। সরকারি দলের সিন্ডিকেটের কারণে জিনিসপত্রের দামের এই কৃত্রিম বৃদ্ধি।’

তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনের কবলে পড়ে মানুষ এমনিতে খেয়ে না খেয়ে নিদারু কষ্টে জীবন যাপন করছে। সারা বছর ধরেই চালে বাজারের আগুন নিভাতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এমন পরিস্থিতিতে রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমি রমজানের প্রাক্কালে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এই দাম বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

রিজভী বলেন, জিনিসপত্রের মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রমজানকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য অসৎ ব্যবসায়ীদেরই এটি কারসাজি। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা এসব ব্যাপারে নির্বাকার। কারণ মানুষের কষ্ট হলেও মুনাফা করছে ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের লোকেরা।

তিনি বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে আকাশে সমুদ্রে ঘুরালেও সারাদেশের বেহাল সড়কে মানুষ ভুক্তভুগী। তথাকথিত ভাঁওতাবাজী উন্নয়নের নামে সারাদেশের সড়ক মহাসড়কে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। তাদের আমলেই বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য শহরের খেতাব পেয়েছে ঢাকা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতারণা করছেন উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ সামলাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও এখনও গেজেট প্রকাশ না করায় আবারও আন্দোলনে নামছে শিক্ষার্থীরা। যদিও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার, বাতিল নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ক্রদ্ধু হয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আহমেদ আযম খান, আব্দুস সালাম আজাদ, রফিক শিকদার, আসাদুল করিম শাহীন, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।