মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশুর মা দোষীদের বিচার চান


প্রকাশিত: ০৪:০৮ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৫

মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালিন মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতকের মা নাজমা বেগম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। নিরাপরাধ শিশুকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী এলাকার কখ্যাত সন্ত্রাসী আজিবর ও আলী হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান নাজমা বেগম।

নবজাতক শিশু কন্যাটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ নাজমা বেগম মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাগুরা সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শামসুন্নার লাইজু  বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, গুলিবিদ্ধ নবজাতকের মা নাজমা বেগম আশংকামুক্ত বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমানে মা নাজমা বেগম মাগুরা সদর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শিশু কন্যার  সুস্থতা কমনা করে সৃষ্টি কর্তার কাছে দোয়া ও কোরআন পাঠ করে সময় কাটাচ্ছেন। আশায় বুক বেঁধে আছেন দ্রুতই  তার মেয়ে সুস্থ হয়ে তার বুকে ফিরে আসবে। সেই সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতককে উপযুক্ত সময়ে ঢাকায় পাঠানোর জন্য তিনি মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার ও শিশুটির চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

মাগুরার পুলিশ সুপার একে এম এহসান উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, এ জঘন্য ঘটনায় মাগুরা সদর থানায়  ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ আব্দুস সোবহান (৩০) ও সুমন হোসেন(২৫) নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে। সেই সঙ্গে আসামিদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পুলিশ ফরিদপুর থেকে আটক করেছে। মামলার বাকি আসামিদেরও পুলিশ খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, শহরতলীর দোয়ারপাড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবলীগ নেতা কর্মী পরিচয়ের কামরুল ভূঁইয়া এবং আলী হোসেন ও আজিবর গ্রুপের সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এসময় কামরুলের ভাই বাচ্চু ভূঁইয়ার ৭ মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগমের পেটে গুলি লাগে। একই সময় আব্দুল মোমিন ভূঁইয়া ও মিরাজ হোসেন নামে অন্য দুজনও গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন সন্ধ্যায়ই মোমিন ভূঁইয়া, মিরাজ হোসেনসহ নাজমা বেগমকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোমিন ভূঁইয়া (৭০) সদর হাসপাতালে মারা যান।

অন্যদিকে একই রাতে নাজমা বেগমকে বাঁচানোর প্রয়োজনে মাগুরা সদর হাসপাতালে জরুরি অপারেশন করে সাত মাসের সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে চিকিৎসকরা বাধ্য হন। ওই সময় অপারেশন রুমেই দেখা যায় মাতৃগর্ভেই শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মাগুরা সদর হাসপাতালে ইনকিউবেটরসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি না থাকায় শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তখন মাগুরার পুলিশ প্রয়োজনীয় অর্থকড়ি পরিবহন ও পুলিশ ফোর্স সঙ্গে দিয়ে রাতারাতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতককে পাঠিয়ে দেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সেখানে শিশুটির সুচিকিৎসা চলছে এবং আশংকামুক্ত রয়েছে।

এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ পাহারা ও টহল  বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে উপযুক্ত বিচার ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে মাগুরা শহরের চৌরঙ্গি মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।

নিহত মোমিন ভূঁইয়া ও গুলিবিদ্ধ নবজাতকের মা নাজমা বেগমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বিশেষ করে নবজাতক শিশু কন্যার চিকিৎসা ও সুস্থতা নিয়ে খুবই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন স্বজনরা।



দরিমাগুরা, দোয়ারপাড় এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে একই এলাকার আজিবর, আলী হোসেন একজোট হয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, টেনডারবাজিসহ দোকান, বাড়ি-ঘরসহ জমাজমি দখলের ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করে আসছিল। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে কোনো ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিরোধ শুরু হয়। বিগত ৬/৭ মাস যাবৎ কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আলী হোসেন ও আজিবর গ্রুপের দ্বন্দ্ব বিরোধ চরমে পৌঁছে। এ সূত্র ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

উভয় পক্ষই নিজেদের গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের নানা অপকর্মে লিপ্ত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান-সন্ত্রাসীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় পুলিশ অতীতে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি।

মাগুরার সহকারী পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, এঘটনায় বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মাগুরা জেলায় ও জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান চলছে। আসামিদের অচিরেই গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করার সর্বত্র চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তবে মাগুরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক হীরক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত  কেউই যুবলীগের কর্মী নন।

মো. আরাফাত হোসেন/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।