নির্বাচন স্থগিতে আ.লীগের চিন্তার প্রতিফলন : বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ০৬ মে ২০১৮

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আদেশকে আওয়ামী লীগের চিন্তার প্রতিফল হিসেবে দেখছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে আজ রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে দলটি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত শিমুলিয়া এলাকার এক ব্যক্তির রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন।

এ আদেশের পর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা সরকারি দলের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখনই ভোট দিতে যাবে, তখনই নির্বাচন বন্ধ। যখনই তাদের মনে হচ্ছে নির্বাচনের গতিবিধি তাদের পক্ষে নাই তখনই ভোট ডাকাতি করতে হবে। নইলে ভোট বন্ধ করে দিতে হবে। এই দুইটা থেকে একটা।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘দলীয়ভাবে কী করার আছে, ইলেকশন বন্ধ করে দিলে বিএনপিরই বা কী ? তাদের গণতন্ত্রের প্রতি যে মনোভাব, গণতন্ত্র ও জনগণের ওপর আস্থার যে অভাব, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রতি তাদের যে মনোভাব তা প্রকাশ পাচ্ছে জনগণের কাছে।’

খসরু বলেন, ‘জনগণের তো আর বোঝার এখন বাকি নেই। তারপরও তো জনগণ দেখতে পাচ্ছে কী হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রকে নিয়ে কীভাবে খেলা হচ্ছে। ইচ্ছে মতো খেলা চলছে আরকি। যখন যে রকম ইচ্ছে তখন সেরকম খেলা চলছে। জনগণের তোয়াক্কা তো তারা করছে না। যে রকম ইচ্ছে সেরকম খেলছে আরকি।’

বিএনপি সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র পদে বিএনপির সাতজন মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। যাদের মধ্যে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, সালাহ উদ্দিন সরকার, শওকত হোসেন সরকার, এম মঞ্জুরুল করিম রনি, মো. শরাফত হোসেন এবং আব্দুস সালাম ছিলেন। দলের মনোনয়ন বোর্ড হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দেয়।

এ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এবং ২০দলীয় জোটের নেতারা বেশ সক্রিয় ছিলেন এবং নির্বাচনে জয়ের আশাবাদী ছিলেন।

চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ইস্যুতে আজ সন্ধ্যার পর চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসবেন দলের শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন তারা।

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে আলাদা দুটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওই নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদার বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং তাবিথ আউয়াল। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পান তাবিথ আউয়াল।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে ড. আসাদুজ্জামান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের ফাঁকটা বরাবরই রেখেছে সরকার। আবহাওয়া যদি তাদের অনুকূলে থাকত তাহলে এই সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি এখন আর সামনে আসত না।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই সরকার তো প্রতিনিয়ত আইন অঙ্গন ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। সেটি খালেদা জিয়ার মামলা হোক আর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হোক। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত হলো তারই একটি অংশ।

রিপন বলেন, সরকার যখন দেখেছে গাজীপুরে ব্যাপক ভোটে বিএনপি জিতবে এবং গতবারের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে, কারণ এবারের ক্যাম্পেইনটা ছিল গাজীপুরের ভোট না, খুলনার ভোট না, এবার ভোট হলো বেগম জিয়ার। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি একটা অন্যায় করা হয়েছে, সেটার প্রতিবাদ করার জন্য আপনারা ভোট দেন বলে ক্যাম্পেইন চালানো হয়। এখানে বিএনপির প্রার্থী যদি গতবারের তুলনায় বেশি ভোট পাইত তাহলে কী সিগনিফাইন করত, যে পিপল গভরনমেন্টের অপারেশনকে প্রতিবাদ করছে। সাপোর্ট করছে না এবং বিএনপির পক্ষে জনমত আরও বেশি বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইলেকশনটা গভর্মেন্ট দিতে চায় না। এ কারণে কৌশলে গাজীপুরের নির্বাচনটা স্থগিত করা হয়েছে। তবে গভর্মেন্টের এই পলায়নপর মনোবৃত্তি আগামীতেও দেখা যাবে। জাতীয় নির্বাচনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের এভাবে পালাতে হবে। সরকারের এই পলায়নপর মনোবৃত্তি দেখে তাদের প্রতি করুণা হয়।’

 

কেএইচ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।