এই গেটে কোনো গেট ম্যান নাই
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেল লাইনের চারটি ক্রসিংয়ের মধ্যে তিনটিতেই নেই কোনো গার্ড ও বেরিকেড। এই ক্রসিংগুলোর আশপাশে দেয়াল ও গাছপালা থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
এ রেল ক্রসিংগুলো রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি, চারুকলা, স্টেশন বাজার ও বুদপাড়ায়। সরেজমিনে চারুকলা বিভাগের কাছে রেলক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন আসছে আর সাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল রাস্তার দুইপাশে নিজ দায়িত্বে দাঁড়িয়ে গেছে। পরে ট্রেন চলে গেলে যানবাহনগুলো পুনরায় স্বাভাবিকভাবে চলতে শুরু করে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে রেললাইনের ওপারে রয়েছে চারুকলা ও কৃষি অনুষদ। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে মেস থেকে ক্লাস করতে মূল ক্যাম্পাসে আসতে হয় ওই ক্রসিংগুলো পার হয়ে। তাই ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন শিক্ষার্থীরা।
ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমাদের খুব সাবধানে চলাচল করতে হয়। কেউ অসতর্কভাবে চলতে গেলেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আর মাঝে মধ্যেই ঘটে এমন দুর্ঘটনা।
তবে রেল ক্রসিংগুলোর পাশেই সতর্ক বার্তায় লেখা রয়েছে, এই গেটে কোনো গেট ম্যান নাই পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যেকোনো রূপ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নিজে বাধ্য থাকিবেন।
সাধারণ পথচারী ও চালকরাই তাদের জীবন দিয়ে যেন এর ক্ষতিপূরণ দিয়ে চলছেন। কারণ, প্রতিবছরই এই রেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। গত ছয় মাস আগেও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে ফিরে যাওয়ার সময় মেহেরচণ্ডি রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
চারুকলা বিভাগের পাশে অবস্থিত দোকানদার আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, হরতার-অবরোধের সময় দুর্বৃত্তরা রেল লাইনের যেন কোনো ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য দুইজন আনসারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো কয়েক মাসের জন্য। তারা ট্রেন আসলে বাঁশি বাজিয়ে যানবাহন থামাতো। কিন্তু এখন হরতাল-অবরোধও নাই, আনসারও নাই।
ক্রসিংগুলোতে কোনো গার্ড না থাকলেও বুধবার হঠাৎই ক্রসিংগুলোতে কর্তব্যরত অবস্থায় দেখা যায় রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে। আলমগীর হোসেন নামের ওই কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আমি কোনো ক্রসিংয়ের গেটম্যান না, রেল লাইন মেরামত করি। আজ (বুধবার) দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আসার কথা রয়েছে। তাই ক্রসিংগুলোতে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রেল লাইনের মিস্ত্রি আলমগীর হোসেন আরো বলেন, মেহেরচণ্ডিতে কর্তব্যরত গেট ম্যানের নাম মিজান। নিজ উদ্যোগে আগে তিনি ট্রেন আসলে বাঁশ দিয়ে রাস্তা বেরিকেড দিতেন। এ বিষয়টি সবার নজরে আসলে রেল কর্তৃপক্ষ তাকে খুশি হয়ে নিয়োগ দেন। এখনো মিজান মেহেরচণ্ডিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের অনেক জায়গাতেই রেল ক্রসিংয়ে কোনো গেট নেই। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রসিংগুলোতে গেট দেওয়ার জন্য কথা বলেছি। তবে ক্রসিংগুলোতে গেট দেওয়ার সম্ভাবনা এখন নেই। তাছাড়া ক্রসিংগুলোতে গেট দেওয়াতো পুরোপুরি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
তবে রাজশাহী রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, সবগুলো ক্রসিংয়ে গেট দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে। তবে রেল লাইনের উপর দিয়ে যে ডিপার্টমেন্ট (যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) রাস্তা নিবে গেট নির্মাণের খরচ সেই ডিপার্টমেন্টকে দিতে হবে। কিন্তু যে ডিপার্টমেন্টগুলো রাস্তা নিয়েছে তারা সাড়া দিচ্ছে না বলেই আমরা কাজ করতে পারছি না। একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা সাড়া পাচ্ছি না বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রসিংগুলোতে গেট নির্মাণ করতে পারছি না।
রাশেদ রিন্টু/এমজেড/আরআইপি