নরসিংদীতে খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণ : পানিবন্দি মানুষ


প্রকাশিত: ১০:১৭ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

নরসিংদীর রায়পুরায় চরসুবুদ্ধি গ্রামে সরকারি খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েকশ পরিবার। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহালেও তা সমাধানে প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা। উপজেলার চরসুবুদ্ধি গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদী। সেই নদীতে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের যে সরকারি খাল রয়েছে তা দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী রতন ও ওসমান নামের দুই ব্যক্তি। তারা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে খাল ভরাট করে গড়ে তুলেছেন পোল্ট্রি ফার্ম ও পাকা মার্কেট। প্রতি মাসে ভাড়া দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা মুনাফা।

এতে করে চলতি বর্ষায় চরসুবুদ্ধি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে প্রবেশ মুখে সড়কে কোমর সমান পানি। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি পানির নীচে। ফলে ঘরের ভেতর ইটের উপর কোনোরকমে চুলা বানিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। অনেক পরিবার শুধু শুকনো খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

গৃহিণী অজিফা কান্না জড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে জানান, সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। রান্না করতে পারছিনা। ঈদে ছেলে-মেয়েদের ভালো কিছু রান্না করেও খাওয়াতে পরিনি। এমন কষ্টের ঈদ আমরা এর আগে কখনো পার করিনি। যাদের জন্য এই কষ্ট আল্লাহ তাদের বিচার করুক।

এছাড়া ইসলামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী শামীমা ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা জাগো নিউজকে বলেন, আকস্মিক কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে স্কুলে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকায় রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়াও বিঘ্নিত হচ্ছে চরমভাবে।

একই গ্রামের বিল্লাল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিগত ১৯৮৮ সালের বন্যায়ও এ গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি।
গ্রামের অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে লেবু ও পেয়ারার চাষ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেক মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ এক মাসের ও বেশি সময় ধরে পানি জমে থাকায় তাদের পেয়ারা ও লেবু গাছের গোড়ায় পঁচন ধরেছে। মারা যাচ্ছে গাছ , ফলন যা হয়েছিল তাও নষ্ট হয়েছে।

পেয়ারা চাষি আলামিন জাগো নিউজকে বলেন, এই জলাবদ্ধতার কারণে পেয়ারা গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এবার মনে হয় পেয়ারা বিক্রি করতে পারবো না। পেয়ারা বিক্রি করতে না পারলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে পুরোপুরি। জলাবদ্ধ পানিতে ভেসে একাকার মানুষ, গরুর মল। এই পানি থেকে আসে দুর্গন্ধ। বাধ্য হয়ে এ পানিতে চলতে গিয়ে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের হয়েছে চর্ম রোগ, ঠাণ্ডা জ্বর কাশি। বসত-ঘরসহ সব জায়গায় পানি থাকায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিাবকরা হয় পড়েছেন আতঙ্কিত।

গ্রামের মসজিদ পানিতে ডুবে থাকায় সেখানে নামাজ পরতে পারছেন না মুসুল্লিরা। ইমামের ঘরে হাঁটু পানি কোনোরকমে বিছানায় উঠে থাকতে হচ্ছে। মসজিদের ইমাম মৌলভী মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বৃষ্টির পানি মসজিদের ভেতর পর্যন্ত চলে আসায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজটুকুও আদায় করতে পারেননি এলাকার অধিকাংশ মানুষ। কিছু লোকের বিবেকহীন কাজের জন্য আজ এলাকাবাসীর এই কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি মানবপাচারকারী হিসেবে গ্রেফতার দুলাল অবৈধভাবে খাল দখলকারী রতন মিয়ার ছেলে। তাদের ছত্রছায়ায় কালভার্টের একমাথায় আহাম্মদ হোসেন ও অপর মাথায় জাকির হোসেন মাটি ভরাট করে টিনের তৈরি ঘর তোলে দোকান ভাড়া দিয়েছেন।

দখলদার রতন মিয়া বলেন, আমার ক্রয়কৃত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করেছি। সামনে একটি খাল ছিল রাস্তার সঙ্গে হওয়ায় এই জায়গাটুক আমি ভরে পেছন দিক দিয়ে খালের জায়গা রেখেছি। সরকারি খাল অনুমতি ছাড়া কেন ভরেছেন জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।  

চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার আগেই এখানে খাল দখল করে মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এই দখল উচ্ছেদ করতে অতি শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বক্স কালভার্ট করে গ্রামের পানি নিষ্কাশন করার জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।