তারেকের আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই : আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশি পাসপোর্ট সারেন্ডার করে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এখন আর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি ও এর গুরুত্ব নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের নাগরিক না থাকলেও লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্টের আওতায় তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) যদি বলে থাকেন আমি পাসপোর্ট সারেন্ডার করে দিলাম, আমি থাকতে চাই না- এর মানেটা কী? আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট রাখতে চাই না, তাহলে এখানে তার আইডেন্টিটিটা কী?’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের পাসপোর্টে ছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার আইডেন্টিটি ছিল বাংলাদেশের একজন নাগরিক। যেখানে তিনি স্বেচ্ছায় বলছেন, আমি আমার বাংলাদেশি পাসপোর্টটা সারেন্ডার করে দিলাম। যখন তিনি ট্রাভেল ডকুমেন্টটা (পাসপোর্ট) সারেন্ডার করে দেন, তখন কি বলা যাবে তিনি তখনও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব রেখে দিয়েছেন?’
তার মানে কি আমরা বলতে পারি কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে আশ্রয় পাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক তো নয়ই, উনি (তারেক রহমান) পাসপোর্ট ইয়ে (সারেন্ডার) করে দিয়েছেন।’
আনিসুল হক বলেন, ‘পাসপোর্ট সারেন্ডার করার পর তিনি যখন বিদেশে গেছেন, তখন ব্রিটিশ সরকারের একটা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে গেছেন। এর মানে এই নয়কি যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছেন? অবকোর্স (অবশ্যই)।’
পাসপোর্টের সঙ্গে নাগরিকত্বের সম্পর্ক জানতে চাইছে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকলে আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে তবে কিন্তু নাগরিকত্ব এফেক্টেড হয় না। পাসপোর্ট জিনিসটা কি, এটা একটা ট্রাভেল ডকুমেন্টের মতো, বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। বাইরে গেলে আপনি যে বাংলাদেশের নাগরিক সেটার আইডেন্টিটি।’
‘আমি যতটুকু তথ্য জানি, যে বিতর্ক হচ্ছে এর থেকে আমি যে তথ্য জানতে পেরেছি তা হচ্ছে- একজন পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসাসি তারেক রহমান। তিনি ইউনাইটেড কিংডমে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য তার পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। এর মানে তিনি বলেছেন আপাতত আমি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না। আমি এই পাসপোর্টটা সারেন্ডার করলাম, আপনারা আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) যখন গিয়েছিলেন তিনি মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিলেন, গিয়ে তিনি পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন এর মানে হচ্ছে তিনি স্বেচ্ছায় বলছেন আমি আর বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না। আমাদের এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন তার স্ট্যাটাস হচ্ছে তিনি ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, ইউনাইটেড কিংডম আশ্রয় দিয়েছে কি-না সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। যদি দিয়ে থাকে ভালো কথা, না দিয়ে থাকলে তা আমি জানি না। তিনি চেয়েছেন। এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ডিনাই (প্রত্যাখ্যান) করেছেন। কিন্তু তার মানে এই না ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে চাইলে পারবেন না। এটা তো নয়।’
তারেক রহমান বাংলাদেশর নাগরিক না হলে সরকার কীভাবে তাকে ফিরিয়ে আনবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে অপরাধ করেছেন, তখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের এক্সট্রাডিশন ট্রিটি (বন্দী বিনিময় চুক্তি) নেই। কিন্তু এক্সট্রাডিশন ট্রিটি করতে কিন্তু কোন বাধা নেই। আমরা সেই রকম আলাপ-আলোচনাও করছি।’
‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এটা আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্ট আমাদের দেশে হয়েছে। এই আইনটি করার প্রয়োজনীয়তা ছিল জাতিসংঘের একটি নির্দেশনার কারণে। জাতিসংঘের যেসব সদস্য আছে তাদের মধ্যে এই আইনটি থাকলে ট্রান্স বর্ডার অপরাধ বা যে কোনো অপরাধী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় তাকে যেন ধরে আনার সুবিধাটা থাকে। এজন্য এই আইনটি করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ যখন এই আইনটি করার জন্য সকল দেশকে পরামর্শ দেয়, তখন উদ্দেশ্য এটাই ছিল বলে তারা বলেছে। কারণ আজকাল অনেক ট্রান্সবর্ডার ট্রান্সন্যাশনাল ফৌজদারি অপরাধ ঘটে যাচ্ছে। এজন্য তারেক রহমান যদি বাংলাদেশের নাগরিক এখন নাও থাকেন তাহলেও লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্টের আন্ডারে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও তার টেলিফোন কথপোকথনসহ বিভিন্ন বিষয় প্রচার করা হচ্ছে, এতে আদালত অবমাননা করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্টের অর্ডার যদি অমান্য করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেটা আদালত অবমাননা হবে। সেক্ষেত্রে আমি সবাইকে আদালতের নির্দেশটি পালন করার অনুরোধ করছি।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকার পে-অর্ডার জমা দেয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনমন্ত্রী।
আরএমএম/এফএইচ/আরএস/জেআইএম