তারেক রহমান নাগরিকত্ব বর্জন করেননি : ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এই বিতর্ক সৃষ্টি করে সরকার নিজেরাই নিজেদের গহব্বরে পড়েছেন। কারণ, কোনো মতেই ব্রিটিশ আইনের মধ্যে পাসপোর্টের নাগরিকত্ব বর্জনের কোনো কারণ নেই।
বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মাববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নাগরিকত্ব কেউ কখনো বর্জন দেয় না। সবসময় এটা রেখেই আশ্রয় প্রার্থনা করে। অথচ তারা আবারও মিথ্যাচার করেছেন। তিনি আশ্রয় নেয়ার সময় নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। কোনো মতেই না। তিনি নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। তিনি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন, থাকবেন।’
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যেখানে কেউ বাস করে না, স্যাঁতসেঁতে একটা ঘরের মধ্যে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। কারাগারে প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছেন। ক্রমান্বয়ে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। গত ১৪দিন যাবৎ তার পরিবারের সদস্য এবং আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। কেবলমাত্র গতকাল স্বজনরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে গেছেন যে, দু’তলা থেকে নিচে নামতে পারছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য বারবার আমরা বলেছি, তার যে চিকিৎসক আছে তাদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তার যে এমআরআই করা দরকার তা অন্য কোথাও করার ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র ইউনাইটেড হাসপাতালেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।’
সরকার বিরোধী এই নেতা বলেন, ‘আমরা জানি, এই সরকার কেন আটকে রেখেছে? সরকার আতঙ্কিত। যদি বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকেন, গণতন্ত্র মুক্তির যে আন্দোলন তা কোনভাবেই তারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এবং তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হবে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকে এই অবস্থায় আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। তারা বিভিন্ন রকম প্রচারণা ও মিথ্যা কথার মাধ্যমে অপ্রপচার চালিয়ে নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন ‘আজকে এই অনুমতি দেয়ার পরেও আমি লক্ষ্য করেছি এখানে পুলিশের যে আচরণ, সেই আচরণ গণতন্ত্রের পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনের দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচন করতে হলে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সমস্ত রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরি হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি ও সরকারকে জানাতে চাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। গণতন্ত্রকে মুক্ত করব।’
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আবদুল মান্নান, আহমেদ আযম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল খোকন কবীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শিরিন সুলতানা, রফিক শিকদার, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/আরআইপি