আওয়ামী লীগ কি সত্যিই দেশ চালাচ্ছে, সন্দেহ ফখরুলের
কোনো রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনা করছে না মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমার সন্দেহ হয় আওয়ামী লীগ কি সত্যিই দেশ চালাচ্ছে? অ্যাজ এ পলিটিক্যাল পার্টি আওয়ামী লীগ কি দেশ চালাচ্ছে? কে চালাচ্ছে? আমাদের তো মনে হয় কোনো রাজনৈতিক দল দেশ চালাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘অন্য কেউ দেশ চালাচ্ছে, এটাই আমাদের কাছে সন্দেহ হয়। কারণ একটা গণতান্ত্রিক দল কখনওই এইভাবে নিজের হাতে তৈরি করা তার সন্তান, যার জন্য সে লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে, সেই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টকে জবাই করেছে, গণতন্ত্রকে জবাই করেছে। এগুলো আমাদের ভাবা উচিত। আমরা কেউই কিন্তু এগুলো চিন্তা করি না। আসলে কোথা থেকে কোথায় আসলাম। ’
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবিধনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার প্রভাব বিস্তার করছে এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছেন, যাদের সঙ্গে বিরোধী দলের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনারা দুদক তৈরি করেছেন একটা, যার একমাত্র কাজ হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সমস্ত মিথ্যা মামলাগুলো খাড়া করা। তদন্ত করার কথা বলে তাদের রাজনীতি থেকে বিরত রাখা। কেন?’
তিনি বলেন, ‘এই যে গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা, মন্ত্রীরা যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। তার একটা তদন্ত এখনও পর্যন্ত আপনারা করছেন না। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন, মামলা হয়েছে, আদালতে সাজা পেয়েছে তাদের আপনারা সাজা ইমপ্লিমেন্ট (কার্যকর) করতে পারেন নাই। এখনও বহাল তবিয়তে মন্ত্রী আছে। বহাল তবিয়তে এখনও তারা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করছে। এই যে একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার প্রাপ্য অধিকার থেকে সরকার তাকে বঞ্চিত করেছে অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘তার যখন ডিভিশন পাওয়ার কথা ছিল। তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি, প্রথম তিন-চার দিন। তাকে একটা পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে, গণতান্ত্রিক দেশে এগুলোর নজির আপনি খুঁজে পাবেন না। তার প্রতি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নিয়ে যে আচরণটা করা হচ্ছে, এখানেই পরিষ্কার এই সরকার আসলেই বেগম খালেদা জিয়াকে সঠিক চিকিৎসাও করতে দিতে চায় না। তার একটাই মাত্র কারণ, তারা তাকেই ভয় পায়, কারণ তিনিই একমাত্র গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারেন। তাদের এই দুঃশাসন, অটোক্রেসিকে পরাজিত করতে পারেন। জনগণকে একটা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনিপর এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০দলীয় জোট তাদের অবস্থানে সঠিক আছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করছে। সবসময়ই তারা ২০দলীয় জোটের যে ঘোষিত কর্মসূচি সেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে এবং আন্তরিকভাবে করছে।’
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রত্যাশার কথা যখন আপনারা বলেন, তখন আমার বারবার মনে পড়ে একটা কথা যে, আপনার কতগুলো বিষয় থাকে, এখানে অনেক ছোট বোনেরা আছে, মেয়েরা আছে। তাদের সামনেই বলি, অনেকেই ভালোবাসার কথা বলে প্রত্যাশা করেন যে ভালোবাসা ফেরত পাবেন। তাই না। কিন্তু দেখা যায়, আসলে ফেরত পায় না। অনেকটা একতরফা হয়। যা হোক আমি একটু হালকা করে বললাম আর কি। বিষয়টা হচ্ছে যে এখানে আমরা তো সবসময় প্রত্যাশা করছি যে ভালো ইলেকশন হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘কখনোই তা হয় না, কারণ যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটা পরিচালনা করে তাদের তো কোনো ক্ষমতাই নেই। তারা তো ঠুঁটো জগন্নাথ। তাদের যা যা নির্দেশ করে তাদের তাই করতে হয়। আপনি দেখেন দুদক একইভাবে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে তদন্ত শুরু করেছে। এখানে এমনও নেতা আছে যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। তাই না।
গোটা বাংলাদেশের সমাজের যে কাঠামো, রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো তা বিকৃত করা হচ্ছে পুরোপুরি, গণতন্ত্রের কথা বলে সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আইনের লোকেরা তারা হুকুম দেয়, এটা করতে হবে ওটা করতে হবে। রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই তো চলছে দেশ।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জাম সেলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/জেডএ/পিআর