লক্ষ্য পূরণে বিএনপির ৩ কৌশল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ২৪ মার্চ ২০১৮

আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এবং রাজপথের উত্তাপে দলীয় প্রধানের মুক্তি নিশ্চিতসহ রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করতে চায় বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে সামনে নিয়ে একদিকে দলটি যেমন কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে দলটির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার কারাবাসে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে রাজনীতিতে এমন গুঞ্জন থাকলেও এখন পর্যন্ত অহিংস কর্মসূচিতে রয়েছে দলটি। খালেদা জিয়ার কারাবাস এক-দুই সপ্তাহের জন্য হতে পারে দলের নেতাকর্মীদের এমন ধারণা শুরুতে থাকলেও তার মুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় এখন তারা উদ্বিগ্ন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অবস্থান, অনশন, কালোপতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আটক হয়েছেন। পুলিশ হেফাজতে ছাত্রদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবির আন্দোলনের শুরুতে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি পুরো উল্টো।

জানা গেছে, খালেদার মুক্তিতে নতুন আশা নিয়ে বিদেশি কূটনৈতিক মহলে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি সফল করতে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে টিম গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তারা সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন। তৃণমূলের প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়েছে। নিয়মিত আপডেটও তাদের জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দফতরে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। একদিকে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ অন্যদিকে তৃণমূলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে কঠোর আন্দোলন, এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রফিক শিকদার জাগো নিউজকে জানান, ‘মামলার গ্রাউন্ড, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়সসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে আমি ধারণা করেছিলাম ম্যাডামের সাজা হবে না। তাছাড়া মামলার সঙ্গে ম্যাডামের সংশ্লিষ্টতাই নেই। ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলমান। আমরা আশা করছি আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব। খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।’

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন,‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আর কতদিন? একটা সময় হবে মানুষ আমাদের কাছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আশা করবে না। তখন বাধ্য হয়ে আমাদের মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যতই কৌশল করুক না কেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আপিল বিভাগ দুই মাসের জন্য জামিন স্থগিত করেছেন, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আইন অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দুটি পথ আছে, একটা আইনের, আরেকটা রাজপথ। আমরা আইনি লড়াই করব আবার রাজপথেও থাকতে হবে। শুধু আইনি লড়াই দিয়ে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দেশের আইনজীবী প্যানেলকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সহযোগিতার জন্য ক্রিমিনাল মামলায় অভিজ্ঞ বৃটেনের রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী, ব্যারিস্টার লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়া হয়।

খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার জন্য দেশের আইনজীবীরা যথেষ্ট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘এটা ঠিক না, বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য এবং দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা দিতে লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে বিএনপি কতটুকু সাড়া পাচ্ছে, জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কতটুকু সাড়া এটা আমার বলার কিছু নেই, এটা সাংবাদিকরা দেখবে, জনগণ দেখবে। তবে আমার পর্যবেক্ষণ হলো, বিরোধী দলকে খুব ভয় পাচ্ছে সরকার। জনগণের মতামতকে ভয় পাচ্ছে। জনগণের মতামতকে ভয় পাচ্ছে বলে তারা বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে অনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার জামিন আটকাচ্ছে। এটা একটা অনৈতিক কাজ। এটা হলো সরকারের ভয় পাওয়ার লক্ষণ। তারপর তাদের মিটিং করতে দিচ্ছে না। একটা গণতান্ত্রিক দেশে মিটিং করতে দেবে না, দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অতীতে বিএনপি যেভাবে তার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়েছে, সেভাবে চলতে থাকুক, তাদের বলতে হবে, তারা নির্বাচনে থাকবে, খালেদা জিয়া জেলে থাকুক, জেলের বাইরে থাকুক, তারা নির্বাচন করবে। সম্মিলিত বিরোধী দল হিসেবে তারা নির্বাচন করবে।

কেএইচ/জেডএ/ওআর/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।