খালেদার জামিন ও রায়ের কপি নিয়ে নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও রায়ের কপির বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। অভিযোগও উত্থাপন করছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। আদালতের এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার ছলচাতুরী করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মিথ্যা বলছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, কারাগার চলবে জেল কোড অনুযায়ী। এখানে খালেদা জিয়ার জন্য আমরা বিশাল জনতার সমাবেশ করতে পারবো না। কারাগার তো নির্জন জায়গা। বাইরে নানা ঝুট ঝামেলায় থাকেন, এটি একটু শান্তিতে, স্বস্তিতে থাকার একটা জায়গা। কারাগারে থাকার মধ্য দিয়ে তিনি একটু বিশ্রামের সুযোগ পেলেন।

কাদের বলেন, অন্ধকারে ঢিল ছোড়া বিএনপির পুরনো অভ্যাস। আদালতের আদেশের বাইরে খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো হাত নেই, কোনো হস্তক্ষেপ নেই। খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো বা তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেয়া এটা আদালতের বিষয়, সরকারের নয়।

তিনি বলেন, কারাগারে ডিভিশন নিয়ে খালেদা জিয়ার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি তার গৃহকর্মীকেও তিনি সঙ্গে নিয়ে কারাগারে আছেন। যেটা এ দেশে নজিরবিহীন। এ সুযোগ বাংলাদেশে কেউ পান না।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া সাজার রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রায়ের কপি ইচ্ছে করে দেরিতে দেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, আইন অনুসারে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রায়ের কপি দেয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দিতে দেরি করছে। এ কারণে আপিল করা যাচ্ছে না। তারা চায় খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হোক। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে রায়ের কপি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে বেআইনি কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এ প্রচেষ্টা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।

রায়ের কপি ইচ্ছে করে দেরিতে দেয়া হচ্ছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মিথ্যা বলছেন। ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের কপি টাইপ করতে যুক্তিসংগত যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময়ই কপি পাবেন তারা। এর এক মিনিটও দেরি হবে না। এতে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে আর কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়নি। কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবেও না। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের জন্য জজকে জিম্মি করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ দিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরী করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিএনপি চেয়ারপারসনকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই সরকার এ ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রায় হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত রায়ের কপি পাওয়া যায়নি। এই যে ছলচাতুরী, এটা করার অর্থই হলো যে, যতদিন পারা যায়, একটা দিন যদি বেশি রাখা যায় বেগম জিয়াকে জেলখানায়। তবে তা বুমেরাং হচ্ছে বলেও সরকারকে সতর্ক করে দেন তিনি। তার মতে, এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যখনই রায়ের নকল পাব, আমরা আপিল ফাইল করব। আপিলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা তার জামিন চাইব। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ বছরের (সাজার মেয়াদ) জন্য জামিন এমনিতেই অন্তত লিবারেলি কোর্ট দেখে। ৫ বছরের ব্যাপারে এমন কিছু না। বিএনপি চেয়ারপারসনকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে নির্জন কারাবাসে রাখা সংবিধান ও কারাবিধির পরিপন্থি বলে দাবি করেন মওদুদ। খালেদাকে বন্দী করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার পথও দূরে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এফএইচএস/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।