সরকার গণবিচ্ছিন্ন : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা দেউলিয়া হয়েছে বলেই আজকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও প্রায় ১৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। এ জন্য তাদের বিচার হবে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে সরকার মনে করছে বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে, দমিয়ে রাখা যাবে। সেটা যাবে না। দেশের মানুষ অবশ্যই কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। তিনি ১৬-১৭ কোটি মানুষের নেত্রী, এখনও যখন রাজপথে আসেন তখন লাখ লাখ মানুষ তার পেছনে থাকেন।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের এই সংগ্রাম, এই লড়াই গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লড়াই। খালেদা জিয়ার মুক্তির লড়াই। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার লড়াই।

একই অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিচারের নামে প্রহসন করে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে। আমরা সুবিচার পাইনি। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। তাই আইনিভাবে মোকাবেলা করছি। তারেক রহমানের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদেরকে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অবস্থান কর্মসূচির জায়গা পরিবর্তনে আপনাদের কষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমরা দায়ী নয়। খালেদা জিয়া বন্দী মানে গণতন্ত্র বন্দী। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো।

বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের কারো নেই উল্লেখ করে দলের এই নীতি নির্ধারক বলেন, অনেকে ভেবেছেন কিছু একটা হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ কিছুই হবে না।

সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রী বানিয়েছিলাম। আপনারা তাকে নেলসন মেন্ডেলা বানিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অল্প সময়ে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করে খালেদা জিয়া দ্রুত ফিরে আসবেন। মিথ্যা বানোয়াট মামলায় আপনারা (সরকার) তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। নির্জন কারাগারে পাঠিয়ে প্রমাণ করলেন তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার খালেদাকে মিথ্যা বানোয়াটভাবে সাজা দিয়েছে, তারপর কারাগারে অন্যায়ভাবে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন থেকে বঞ্চিত করেছে।

কারাগারে যাওয়ায় খালেদা জিয়া আরও শক্তিশালী হয়েছেন দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) জাতীয় নেতা থেকে আন্তর্জাতিক নেতা হয়েছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনসমুদ্র দেখে ভয় পেয়ে সরকার আজ আমাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচি করতে দেয়নি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি নির্বাচনে যাবে। আওয়ামী লীগের কবর রচনা হবে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা হয়। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করছেন।

দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নাল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম ইরান, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান প্রমুখ।

এছাড়া ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে এলডিপির শাহাদত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈশা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও পিজিপির আব্দুল মতিন সাউদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। পরে রাতে নয়াপল্টন থেকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়, রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফের ভেন্যু পরিবর্তন করে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিএনপির এই কর্মসূচিতে অসংখ্য নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন সতর্ক অবস্থানে।

এমএম/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।