৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের শঙ্কা

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করবেন ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। রায়কে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বিএনপি বলছে, ওইদিন রাজপথে ফয়সালার দিন। আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি যদি বিশৃঙ্খলা করে তার জবাব দিতে আওয়ামী লীগও প্রস্তুত।

এর আগে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে গত ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতেও খালেদার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রমনা থানাধীন কাকরাইল মৎস্য ভবন মোড়ে ছাত্রদল ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

ফলে এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অপর বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারির কারণে ৮ ফেব্রুয়ারি রাজপথে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বেন। এ প্রেক্ষাপটে দলের করণীয় নির্ধারণে শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে অভিযোগ করে বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে সরাতে ‘নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। এর অংশ হিসেবে ‘অন্তঃসারশূন্য’ ওই মামলাকে রায়ের পর্যায়ে আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ওইদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে সরব থাকবেন। সব ধরনের অরাজকতা প্রতিহত করতে প্রতিটি এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলের নেতারা বলছেন, ৮ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপি দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। অহেতুক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি যেন কোনো ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সজাগ আছে নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন শান্তি-শৃঙ্খলা আর উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে তখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের অরাজকতা প্রতিহত করতে প্রতিটি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ওইদিন ফয়সালার দিন। বিএনপির চেয়ারপারসনের গায়ে যদি ফুলের আঁচড়ও পড়ে বাংলাদেশের মানুষ গর্জে উঠবে।

তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে জেলে পাঠাতে চান প্রধানমন্ত্রী এবং এরশাদ, দেশবাসী সেটা জানে। তাদের এ আক্রোশ দেশবাসী মানবে না। রাস্তায় কে নামলো, কে নামলো না- এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। বাংলাদেশের মানুষ কখনও বসে থাকবে না। আমরা যদি আন্দোলন একবার শুরু করি আপনাকে (শেখ হাসিনা) পরাজিত করার আগে রাস্তা থেকে ঘরে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। ৮ তারিখ থেকেই বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির নেতৃত্বে রাজনৈতিকভাবে অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধে গর্জে উঠবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে কেউ বিশৃঙ্খলা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেবে।

‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, পেশাদার এবং জনগণের বন্ধু। সুতরাং জনগণের জানমালের হেফাজত করতে যা করা প্রয়োজন তা করবে তারা’- বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এফএইচএস/জেডএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।