‘আমরা পাঁচ বছর পরপর জনগণের ম্যান্ডেড নিতে চাই’
১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান অনুযায়ী হবে। এ ক্ষেত্রে একবিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না। এর বাইরে বিএনপির কোনো ফর্মুলায় কাজ হবে না।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি (একাংশ) আয়োজিত ‘সময় এখন বাংলাদেশের’শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাসিম বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য। আমরা পাঁচ বছর পরপর জনগণের ম্যান্ডেড নিতে চাই। এটা বিশ্বাস করি আমরা। এখানে আমাদের মনঞ্জু ভাই (জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান) আছেন। তিনি বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তার দল কতো বড় সেটা বড় কথা না। তিনি তো পার্লামেন্টে আছেনই, সবসময় তাকে দেখেছি পার্লামেন্টে। আমরা যেতে পারি বা না পারি উনি পার্লামেন্টে আছেন। জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন। আমরাও কম-বেশি নির্বাচিত হয়েছি। আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জনগণকে আস্থায় রাখুন। ভোটারদের বিশ্বাস করে নির্বাচনে আসুন। জনগণ যে রায় দেবে আমরা মেনে নেব। এর বাইরে কিছু হবে না। অন্যকিছু চিন্তা করেও লাভ নেই। কোনো ফর্মুলায় কাজ হবে না। ১৪ দল যা বলেছে ওটাই হবে। শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হবে। একবিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না। ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে বলে গেলাম এর বাইরে আমরা যাবো না, যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করণীয় শেখ হাসিনা করেছেন। ১৯৭১ এর ঘাতকদের বিচার করেছি আমরা, যেটা অসম্ভব ছিল, সেটা শেখ হাসিনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শেখ হাসিনা করেছেন। অনেকগুলো বিলম্বিত বিচার, কিবরিয়া সাহেব হত্যার বিচার থেকে শুরু করে ২১ আগস্ট হত্যার বিচার আমরা করেছি এবং সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে।
‘এতো কিছু করার পরও আমার বিএনপির বন্ধুরা বলে দেশে আইনের শাসন নেই। অনেক বুদ্ধিজীবীরা বলে দেশে আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন তখন কোথায় ছিল, যখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল রাস্তায়। প্রেস ক্লাবেও মিটিং করেছে। ৭১-এর ঘাতকদের যখন লাল-সবুজের পতাকা দেয়া হয়েছিল, তখন আইনের শাসন কোথায় ছিল’-বলেন তিনি।
নির্বচন আসলে উল্টা-পাল্টা কথা হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, এই যে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব। এমন কোনো দিন নাই তার কথা শুনি না টেলিভিশনে। তিনি প্রতিদিনই কথা বলে যাচ্ছেন। আজকে না কি বলেছেন- ‘এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করি না। এই সরকাকে বিশ্বাস করি না।’ আমাদের সরকারকে বিশ্বাস করার দরকার নেই। নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করেন।
‘এই কমিশনের অধীনে নির্বাচন করে আমরা তো কুমিল্লায় হেরে গেছি। আমরা তো প্রশ্ন তুলিনি। রংপুরে নির্বাচন হচ্ছে। এটা নিয়ে কথা শুরু হয়ে গেছে রংপুরের ইলেকশন নিরপেক্ষ হবে না। কীভাবে হবে না বলেন? রংপুরের নির্বাচন তো হবে কয়দিন পরে। আগে কীভাবে বললেন? অর্থাৎ যে কোনো ব্যাপারে হোক তারা জনগনের ওপর আস্থা রাখে না’-যোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের ১০ বছরের অর্জন রক্ষার নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন মন্ত্রী, এমপি বানানোর জন্য নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন হবে বাঙালির যে অর্জন আমরা করেছি ৯ বছর ধরে, এটাকে রক্ষা করতে হবে। আজ স্বাধীনতার ভাষণ নিয়ে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিল। এই ভাষণ যেন কোনো দিন নিষিদ্ধ না হয়ে যায় টেলিভিশনে, রেডিওতে। আমরা জঙ্গি দমন করেছি, দেশকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এ অর্জন যাতে নস্যাত হয়ে না যায়, তার জন্য এবার ভোট হবে। মনে রাখবেন এবার ভোটে যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে অন্ধকারে চলে যাবেন আবার। সমস্ত বাঙালিকে মনে রাখতে হবে এ নির্বাচনে পরাজয়ের অর্থ হলো অন্ধকারে চলে যাওয়া।
দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতে পারে উল্লেখ করে নাসিম বলেন, আমরা প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছি। আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে। ভুল-ত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। সরকার যদি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে চাওয়া-পাওয়া হয়তো ঠিকমতো পূরণ হয় না। রাশিয়া, চায়নায় কোনো জবাবদিহি নেই। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো কাজ করলেই তো জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের তো ভুল, ত্রুটি হতেই পারে। এই দেশ শেখ হাসানির নেতৃত্বে আমরা কতো কষ্ট করে চালাচ্ছি। সেই দেশে বিরাট একটা বাধা আছে। না, সব কিছুতে ‘নো’, একটা দল এখানে আছে সবকিছুতে নো বলে। যে কোনো ভালো কাজ করলেও নো। এই দেশ আমরা পরিচালনা করছি।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিশ্চিত হবে। কারণ এ বার্ডেন (বোঝা) আমরা দীর্ঘদিন রাখতে পারব না।
এমএএস/জেডএ/আরআইপি