‘মিথ্যা’ স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ ফরহাদ মজহারের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৯ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭

চাপ দিয়ে ও মারধর করে তার কাছ থেকে ‘মিথ্যা’ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। 'নিখোঁজ' থেকে ফেরত আসার দীর্ঘদিন পর শনিবার প্রথম গণমাধ্যমের সামনে এসে এ অভিযোগ করেন তিনি। ফরহাদ মজহারের শ্যামলীর বাসায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় ফরহাদ মজহার বলেন, 'সেদিন তাকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। পরে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা তাদের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। '

‘গুম’ করার উদ্দেশ্যেই তাকে ধরে নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'সেখান থেকে উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জোরাল ভূমিকা রেখেছে, তবে পরে চাপ দিয়ে ও মারধর করে আমার কাছ থেকে ‘মিথ্যা’ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, ‘আমি নাটক করিনি, আমাকে যা বলা হয়েছে, তাই করেছি। আদালতে দেয়া জবানবন্দি আমার না। আমাকে যা লিখে দেয়া হয়েছে, আমি তাই আদালতে দিয়েছি।'

মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করায় গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ফরহাদ মজহার দম্পদির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। আদালতের অনুমতি অনুযায়ী রাজধানীর আদাবর থানায় মামলাটি দায়ের করবেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ মামলা হওয়ার আগেই হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমি শুধু আমার একার জন্য বসিনি। দেশে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্যও আপনাদের সঙ্গে বসেছি।’

বিচারাধীন বিষয়ে প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করবেন না। আমি চাই, বিচার স্বাধীন গতিতে চলুক। আমাকে গুম করা হয়েছিল। আমি একজন ভিকটিম। অথচ আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’

নিজের সেদিনের অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় আমাকে আদাবর থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রতিশ্রুতি দিয়েও আমাকে আমার পরিবারের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। অনেকক্ষণ থানায় বসিয়ে রেখে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি অফিসে বিধ্বস্ত অবস্থায় আমাকে জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য একটি লিখিত কপি দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড বিভ্রান্ত অবস্থায় আদলতকে বলতে পারি যে, আমার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আমার ভীতি ও ট্রমা এখনও কাটেনি। ডিবি অফিস আমাকে দিয়ে যা লিখে নিয়েছে, আমি তাই আপনাকে দিচ্ছি। এরপর তার (আদালত) অনুমতি নিয়ে তার (বিচারক) কক্ষের একটি সোফায় আমি এলিয়ে পড়ি।’

আপনি মামলা থেকে বাঁচতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জন্য নয়। দেশে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্য। আমি ফিরে এসেছি। তারা এখনও ফেরেনি।’

উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই ভোরে শ্যামলীর রিং রোডের ১নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর 'নিখোঁজ' হন ফরহাদ মজহার। পরে স্ত্রীকে নিজের মোবাইল ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়বার কল করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরে হানিফ পরিবহনের বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় ওই দিন রাতেই স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।

জেএ/এসএইচএস/আরআইপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।